আপনার ব্যবহৃত ট্যালকম পাউডারে অ্যাসবেস্টস নেই তো?

আপলোড সময় : ১১-১২-২০২৪ ১১:৪৯:২৯ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১১-১২-২০২৪ ১১:৪৯:২৯ পূর্বাহ্ন
সুকান্ত দাশ:

ঘর আলো করে পৃথিবীতে যখন নতুন অতিথি আসে, পরিবারে তখন আনন্দের সীমা থাকেনা। ছোট শিশুটির যত্নে যেন কোনো কমতি না হয়, এ ব্যাপারে তৎপর থাকেন সবাই। অনাগত শিশুর জন্ম থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠার প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি আগে থেকেই নেন বাবা-মা। নবাগত শিশুর জন্ম থেকে বেড়ে ওঠার এই সময়টাতে মা-বাবাকে শিশুর স্বাস্থ্যের পাশাপাশি যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, সেটি হলো শিশুর ত্বক। 

শিশুরা সাধারণত সংবেদনশীল ও কোমল ত্বকের অধিকারী। না জেনেই যেকোনো ধরনের ক্রিম, লোশন, তেল, পাউডার বা বড়দের ব্যবহার্য কসমেটিক্স প্রোডাক্ট শিশুর ত্বকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুর জন্য ব্যবহৃত বেবি প্রোডাক্টগুলো কেমন হওয়া চাই তা নিয়ে আজকের আলোচনা।
বাজারে প্রচলিত অনেক বেবি পাউডার প্রোডাক্টে ট্যালক-এর মতো ক্ষতিকারক কেমিক্যাল থাকে যা ত্বক ছাড়া শিশুস্বাস্থ্যেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

বিশ্ববাজারের নামিদামি একটি ব্র্যান্ডের বেবি ট্যালকম পাউডারে অ্যাসবেস্টস-এর উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল এবং পরবর্তীতে ইউনাইটেড স্টেটস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কর্তৃক এই ট্যালকযুক্ত বেবি পাউডার ব্যবহার না করার জন্য ভোক্তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি, ২০২৪ সালের মে মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ইউনাইটেড স্টেটস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (NIH) জানিয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করে আসছেন, তাদের মধ্যে ওভারিয়ান ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। একই বছর জুলাই মাসে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা (IARC) ট্যালককে ‘ক্যান্সার সৃষ্টিকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, বিশেষ করে যখন এটি অ্যাসবেস্টসের সাথে মিশ্রিত হয়।

ছেলে শিশুর তুলনায় মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকিটা আরো বেশি।  শিশুর ডায়াপার এরিয়াতে অনেকেই ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করে থাকেন। মেয়ে শিশুর জেনিট্যাল এরিয়াতে (যোনিপথ) অ্যাসবেস্টসযুক্ত ট্যালকম পাউডার প্রবেশ করার ফলে অ্যাসবেস্টসগুলো ওভারিতে জমতে শুরু করে এবং পরবর্তীতে ওভারিয়ান ক্যানসার সৃষ্টি করে। অ্যাসবেস্টসযুক্ত ট্যালকম পাউডার দীর্ঘদিন ব্যবহার করার ফলে শিশু বড় হতে হতে তার ওভারিয়ান ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩০% বেড়ে যায়। ক্যান্সারের ঝুঁকি ছাড়াও ট্যালক ব্যবহারে শিশুর হাঁচিকাশি, শ্বাসকষ্ট জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ট্যালকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে কর্নস্টার্চ, রাইসস্টার্চযুক্ত বেবি পাউডার। এই উপাদানগুলো প্রাকৃতিক, যা শিশুর ত্বকের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। শিশুর শরীরে ইচিং নিরাময়ে এবং যেকোনো প্রকার ইরিটেশন দূর করতেও এ উপাদানগুলো বেশ কার্যকরী। তাই, ডাক্তাররা ট্যালকযুক্ত বেবি পাউডারের বিকল্প হিসেবে কর্নস্টার্চ, রাইসস্টার্চযুক্ত বেবি পাউডার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এছাড়াও, আরো কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা শিশুর ত্বকের জন্য উপকারী ও নিরাপদ। সেক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হলো- ওট মিল্ক, শিয়া বাটার, কোকোয়া বাটার, জোজোবা অয়েল, অ্যামন্ড অয়েল, গ্লিসারিন, অ্যালোভেরা, কোকোনাট অয়েল, ক্যামোমাইল, ক্যালেন্ডুলা ইত্যাদি। ওট মিল্ক, শিয়া বাটার, কোকোয়া বাটার, জোজোবা অয়েল, অ্যামন্ড অয়েল, গ্লিসারিন শিশুর ত্বকের শুষ্কভাব দূর করে এবং প্রয়োজনীয় ময়েশ্চারাইজেশন প্রদান করে। অ্যালোভেরা শিশুর ত্বকের ইরিটেশন দূর করে ও প্রশান্তি এনে দেয়। কোকোনাট অয়েলের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাংগাল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শিশুর ত্বকের যেকোনো ধরনের ইরিটেশন বা র‍্যাশ দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। এছাড়াও, ক্যামোমাইল, ক্যালেন্ডুলা শিশুর সংবেদনশীল ত্বককে যেকোনো প্রকার ইরিটেশন থেকে প্রটেক্ট করে।

এরপর জেনে নেয়া যাক অন্যান্য কেমিক্যাল যেমন প্যারাবেন, সালফেট ইত্যাদি যুক্ত বেবি প্রোডাক্টের অপকারিতার দিকগুলো,
প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনার শিশুদের ত্বকে লিপিড লেয়ারের ঘাটতি থাকে। ফলে, শিশুদের অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি থাকে। এছাড়া, ঋতুভেদেও শিশুদের ত্বকে প্রভাব পড়ে। যেমন, গরমে শিশুর ত্বকে র‍্যাশ বা ইরিটেশন দেখা দেয়। আবার, শীতকালে ত্বক অনেকটাই শুষ্ক হয়ে যায়। তাই, শিশুর কোমল ত্বকে যে কোনো ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে এবং বিকল্প হিসেবে তৈরি প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করতে হবে। কারণ, কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারে দিনশেষে ত্বকের ক্ষতি হয়।

সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ মাত্রার প্যারাবেনের সংস্পর্শে শিশুদের মানসিক বিকাশ, স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধিবৃত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গর্ভাবস্থায়ও মায়ের ব্যবহৃত কসমেটিক্স প্রোডাক্টে প্যারাবেন থাকলে তা গর্ভে থাকা শিশুর ওজনে প্রভাব বিস্তার করে।

প্যারাবেন উপাদানটি মিথাইলপ্যারাবেন, প্রোপাইলপ্যারাবেন, বিউটাইলপ্যারাবেন নামে বিভিন্ন কসমেটিক্স প্রোডাক্টে উপস্থিত থাকে। বেবি প্রোডাক্টটি যেন প্যারাবেন ফ্রি হয়, এ ব্যাপারে মা-বাবাকে সতর্ক থাকতে হবে।
বেবি প্রোডাক্টে ব্যবহৃত আরো একটি ক্ষতিকারক উপাদান হলো সালফেট। সালফেট শিশুর সংবেদনশীল ত্বককে শুষ্ক করে ফেলে, ফলে, দেখা দেয় র‍্যাশ, জ্বালাপোড়া, এমনকি একজিমার মতো নানা ধরনের চর্মরোগ।

সালফেট উপাদানটি তুলনামূলক কম ক্ষতিকারক হলেও এটি শিশুর কোমল ত্বকে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। তাই, বেবি প্রোডাক্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সেটি অবশ্যই সালফেট ফ্রি হওয়া জরুরি।

এছাড়াও নিশ্চিত করতে হবে আরও কিছু বিষয়, যেমন:

শিশুর ত্বকের যত্নে এমন সব প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে যা হাইপোঅ্যালার্জেনিক। অর্থাৎ, অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং ১০০% নিরাপদ। খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর জন্য ব্যবহৃত প্রোডাক্টগুলো যেন পিএইচ ব্যালেন্সড থাকে। এছাড়াও, মৃদু ফর্মুলেশনে তৈরি হালকা সুবাসযুক্ত প্রোডাক্ট বাছাই করা জরুরি। আর, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, শিশুর ত্বকে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি প্রোডাক্ট যেন অবশ্যই ক্লিনিক্যালি ও ডার্মাটোলজি টেস্টেড এবং সার্টিফাইড হয়।  অর্থাৎ, এটি শিশুর ত্বকের জন্য শতভাগ নিরাপদ এবং কোনো ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়নি এমন সব প্রোডাক্টের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

শিশুর ত্বকের যত্ন নিয়ে আলোচনা আজ এ পর্যন্তই। একমাত্র বাবা-মার সচেতনতাই পারে একটি শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিত করতে। কারণ, জন্ম থেকে শুরু করে শিশুর বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে শিশুর সার্বিক যত্ন নেওয়াটাই হলো তার সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার প্রথম পদক্ষেপ।


অফিস :

MyTv Bhaban, 155, 150/3, Hatirjheel, Dhaka-1219

Phone. ☎ +880255128896 ; Fax. +880255128899

Email. admin@mytvbd.tv