গোঁফ নিয়ে খ্যাতির বিড়ম্বনায় রুহুল আমীন

আপলোড সময় : ২৮-১২-২০২৪ ০৯:৪৫:৫২ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৮-১২-২০২৪ ০৯:৪৫:৫২ পূর্বাহ্ন
সুকুমার রায়ের 'গোঁফ চুরি' কবিতা অথবা 'গোঁফ দেখে যায় চেনা' পয়ার নিয়ে যতই হাসিঠাট্টা করা হোক না কেন কেতাদুরস্ত গোঁফ রাখা বা যত্নআত্তি অনেক কষ্টের। গোঁফ নিয়ে খ্যাতির বিড়ম্বনাও কম নয়। শখের গোঁফ নিয়ে নানা অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা ও বিড়ম্বনার গল্প শোনালেন মোচারু রুহুল আমীন।রুহুল আমীনের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আকাশী গ্রামে। বয়স ৭০ ছুঁইছুঁই হলেও সুঠাম দেহধারী। মূল পেশা ঘোড়া ও পাঁঠার ব্যবসা। নিজের পালে রয়েছে সাত ঘোড়া। দুটি দিয়ে ভাড়ায় টমটম চালান। রেসের জন্য রয়েছে দুটি তাজি ঘোড়া। ঘোড় সওয়ার হিসাবেও ব্যাপক সুনাম। দেশের নানা স্থানে ঘৌড় দৌড়ে প্রতিনিয়তই পুরস্কার জেতেন। দেড় ফুট দীর্ঘ গোঁফের অধিকারী রুহুলকে মানুষ ডাকেন মোচারু রুহুল বলে।রুহুল আমীন জানান, মানুষের বহু ধরনের শখ থাকে। কেউ বাড়ি-গাড়ি করেন, কেউ দুই হাতে টাকা কামান। কেউ-বা দুই-তিনটা বিয়ে করেন। কিন্তু আমার বাল্য থেকেই শখ ছিল বড় গোঁফে পুরুষালি প্রকাশ। সেই অদম্য ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। দেশের নানা প্রান্তের মানুষ তাকে চেনেন, জানেন। রেসের তাজি ঘোড়া নিয়ে বের হলে শিশুরা রাস্তায় জড়ো হয়ে উল্লাসে বলতে থাকে, 'ওই যে যাচ্ছে ঘোড়াওয়ালা, মোচওয়ালা দাদু।' এ উচ্ছ্বাস তাকে অনুপ্রাণিত করে।

স্ত্রী, দুই ছেলে, চার নাতি নিয়ে সংসার। আছে শুধু বাড়ি ভিটা। টমটম চালিয়ে কিছুটা আয় হয়। বাড়িতে রয়েছে বেশ কয়েকটি দুধেল গাভি। সবাই মিলে দেখাশোনা করেন। যৌবনে বিয়ে করতে গিয়ে গোঁফ নিয়ে বিপাকে পড়েন। গোঁফের জন্য বিয়ে ভেঙে যেত। বাবা আফছার আকন্দ গোঁফ ছাঁটার নির্দেশ দিলে বাড়ি ছাড়েন রুহুল। গোঁফের জন্য পাত্রীর আকাল পড়ায় বেশ পরিণত বয়সে বিয়ে করতে হয়। গোঁফ নিয়ে প্রথম দিকে পাড়াপড়শিরাও টিপ্পনি কাটত। সমাজপতিরা গোঁফ ছাঁটার জন্য বেশ কয়েকবার সামাজিক সালিশ ডাকে। কিন্তু রুহুল শখের সঙ্গে আপস করেননি।তবে দেশে জরুরি বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে গোঁফ নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। বিশেষ বাহিনীর লোকেরা তখন ক্যাম্পে তলব করেন। কেন বড় গোঁফ জবাব চান। এক সময়ে থানা পুলিশ সন্দেহের চোখে দেখত। নতুন ওসি এলেই ডাক পড়ত। কেন এত বড় গোঁফ কৈফিয়ত চাইতেন। এখনো দেশের কোনো স্থানে ঘোড়া ব্যবসার জন্য গেলে সেখানকার প্রশাসনের লোকজন নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন। অবশ্য এলাকায় এখন আর এ ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয় না।

গোঁফ রাখার মূল কারণ প্রসঙ্গে রুহুল জানান, বাল্যে রূপবান-রহিম বাদশা যাত্রাপালা দেখতেন। সেই পালায় রাজার ১২ দিনের শিশুপুত্র রহিমের সঙ্গে ১২ বছর বয়সি মন্ত্রী কন্যা রূপবানের বিয়ের প্রস্তাব আসে। মন্ত্রী নবজাতক শিশুর নিকট নিজের যুবতি কন্যা সম্প্রদানে অস্বীকৃতি জানান। রাজা অবাধ্য মন্ত্রীকে জল্লাদের হাতে তুলে দেন। এমতাবস্থায় রূপবান জল্লাদের হাতে-পায়ে ধরে পিতাকে রক্ষা এবং রহিমকে বিয়ে করে বনবাসে যান। রুহুল আমীন গোঁফদেহী জল্লাদের ভূমিকাকে পছন্দ করতেন। এজন্য যৌবনে রূ পবান যাত্রা পালায় জল্লাদ চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এখনো সুযোগ পেলে বিশাল খড়গ কাঁধে যাত্রা মঞ্চে জল্লাদ চরিত্রে মঞ্চ কাঁপান। অভিনয়ের পাশাপাশি বাঁশি, ঢোল ও খমক বাজাতেও ওস্তাত তিনি।

তিনি গণমাধ্যমকে আরো জানান, ভ্যানডাইক শৈলীর গোঁফ, যার দুই কোনা সরু হয়ে দৈর্ঘ্য দেড় ফিটে দাঁড়িয়েছে, পরিচর্যায় অনেক সময় ও শ্রম লাগে। গরম আর দূষণ থেকে রক্ষায় দামি শ্যাম্পুতে ধুয়ে গোঁফে সুগন্ধী ও সানস্ক্রিন মাখতে হয়। গোঁফের বাহার দেখে অনেকেই পুরস্কার বা অনুদানও দিয়ে থাকেন। শেষ বয়সে তার দাবি দেশে অন্তত একবার জাতীয় গোঁফ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হোক


Chairman & Managing Director : Nasir Uddin

Director News & Broadcast : Zeker Uddin Samrat

 __________________________________________________________

MyTv Bhaban, 155, 150/3, Hatirjheel, Dhaka-1219

Phone. ☎ +880255128896 ; Fax. +880255128899

Email. news@mytvbd.tv