পোপ মারা গেলে কী ঘটবে? কীভাবে বেছে নেওয়া হবে নতুন পোপ?

আপলোড সময় : ২৬-০২-২০২৫ ১০:০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৬-০২-২০২৫ ১০:০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন
৮৮ বছরের পোপ ফ্রান্সিস ১৪ ফেব্রুয়ারি রোমের জেমেলি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর এসেছে।রোমান ক্যাথলিকদের শীর্ষ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ বলে গত রোববারেই জানিয়েছে ভ্যাটিকান।হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পোপের রক্ত পরীক্ষায় কিডনির কিছু সমস্যা ধরা পড়েছে; নিউমোনিয়াতেও ভুগছেন তিনি। এর জেরে তার দুই ফুসফুসে জটিল ইনফেকশন দেখা দিয়েছে।পোপের রক্তে প্লাটিলেটও অনেক কমেছে এবং রক্তশূন্যতার লক্ষণও রয়েছে। এজন্য তাকে ‘উচ্চ প্রবাহের’ অক্সিজেন দেওয়ার পাশাপাশি রক্তও দেওয়া হচ্ছে। ভ্যাটিকান বলেছে, “হলি ফাদারের অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। তিনি এখনও বিপদমুক্ত নন।”


এর আগেও বিভিন্ন সময়ে পোপ ফ্রান্সিস অসুস্থ হয়েছেন। তবে এই প্রথম ভ্যাটিকানের কর্মকর্তারা তার অবস্থা ‘সঙ্কটজনক’ বলে জানায়। সোমবারের রিপোর্টে পোপের অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে বলে জানানো হয়। তারপরও পোপের বয়স এবং তার মেডিকেল হিস্ট্রির কারণে চিকিৎসকরা সতর্ক রয়েছেন।সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে তার শারীরিক অবস্থা। ৮৮ বছরের পোপ ফ্রান্সিস ১৪ ফেব্রুয়ারি রোমের জেমেলি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রতিনিয়ত খবর আসছে। তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে ভক্তদের মধ্যে।
তবে তার মৃত্যু হলে কী ঘটতে পারে তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার সিনেমা ‘কনক্লেভ’ ২০২৫ সালের ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড জয়ের খবরের পর। ছবিটি ‘ফিকশনাল’ হলেও বাস্তবে দেখা যেতে পারে একই কাহিনী।

পোপ হওয়া নিয়ে বাধতে পারে লড়াই

কার্ডিনালদের নিয়ে নতুন পোপ নির্বাচনের যে বিশেষ প্রক্রিয়া, সেটি ‘কনক্লেভ’ নামে পরিচিত। এ নামেই তৈরি হয়েছে পুরস্কারজয়ী কনক্লেভ সিনেমাটি। পরিচালনা করেছেন এডওয়ার্ড বারগার। মূলত রবার্ট হ্যারিসের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে এটি।পোপের হঠাৎ মৃত্যুর পরের ঘটনা নিয়ে সাজানো হয়েছে সিনেমার গল্প। ছবিতে দেখা গেছে, পোপের মৃত্যুর পর কনক্লেভ আয়োজন চলতে থাকে। কলেজ অব কার্ডিনালসের বাকি সব সদস্য একে একে জড়ো হতে থাকেন। ক্রমেই পোপ কে হবেন সে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে থাকে।কার্ডিনালদের কেউ কেউ পোপ হওয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে কার্ডিনালদের মধ্যে দলাদলিও প্রকট হয়। তবে আসল সমস্যা দেখা দেয়, একজন ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ কার্ডিনাল উড়ে এসে জুড়ে বসার মত কনক্লেভে উপস্থিত হলে।বেরিয়ে আসে তাকে গোপনে কার্ডিনাল বানানোর খবর। সেইসঙ্গে পোপ হওয়ার দৌড়ে থাকা দুইজন কার্ডিনালের অনৈতিক কাণ্ডের কাহিনীও বেরিয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে কনক্লেভের পরিবেশ হয়ে পড়ে অশান্ত। পোপ কে হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।ছবিটি যদিও সত্য ঘটনা অবলম্বনে নয়। কিন্তু বাস্তবে পোপের মৃত্যু ঘটলে কে তার উত্তরাধিকার হবেন তা নিয়ে জানার আগ্রহ বাড়ছে; সিনেমাটির মত একইরকম ঘটনা ঘটার বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

পোপ হওয়া নিয়ে বাধতে পারে লড়াই

খ্রিস্টান ধর্মে পোপ সর্বোচ্চ ধর্মগুরু। যিনি পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন, তিনি ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সব চার্চের প্রধান। পোপ মারা যাওয়ার পরের প্রক্রিয়াগুলো বছরের পর বছর ধরে পরিবরর্তন হয়ে এসেছে।১৯৯৬ সালে এই প্রক্রিয়াকে সময়োপযোগী করে তোলা হয়। আর পোপ ফ্রান্সিসের আমলে ২০১৩ সালে তা আরও পরিমার্জন করা হয়। সর্বশেষ নির্দশাবলী অনুযায়ী, পোপের মৃত্যুর খবর ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়। একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা করা হয়।পোপ মারা গেলে ক্যাথলিক চার্চের কার্ডিনাল ক্যামেরলেঙ্গোকে তা নিশ্চিত করতে হয় পন্টিফিকাল লিটারজিকাল অনুষ্ঠানের নতুন মাস্টার এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সদস্যের সামনেই। কার্ডিনাল ক্যামেরলেঙ্গো একটি পদ, যার অবস্থান পোপের পরেই।একজন চিকিৎসক ক্যামেরলেঙ্গোর সামনে পোপের পালস পরীক্ষা করে পোপকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে, কার্ডিনাল ক্যামেরলেঙ্গো পোপের নাম ধরে তিন বার ডাকেন এবং সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন।সাড়া না পেলে তিনি পোপকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করেন। অতীতে পোপের নাম ধরে ডাকার আগে তার মাথায় রূপার হাতুড়ি দিয়ে তিনবার আঘাত করা হত। তবে সে প্রথা এখন পালন করা হয় না।

মৃত ঘোষণার পর পোপের হাতের সোনার আংটি আইডেন্টিফিকেশন ‘রিং অব ফিশারম্যান’ খুলে নেওয়া হয় এবং অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে তা নষ্ট করা হয়। এর মানে হচ্ছে, তার ক্ষমতাকালের সমাপ্তি। এটি পোপের ক্ষমতা শেষের একটি প্রতীকী প্রথা।এরপর পোপের বাসস্থানগুলোও সিল করে দেওয়া হয়। ক্যামারলেঙ্গো রোমের কার্ডিনাল ভিকারকে পোপের মৃত্যুর খবর জানাবেন। এরপর ভিকার প্রথমে রোমবাসীকে তা জানাবেন এবং তারপর বিবৃতি দিয়ে বিশ্ববাসীকে তা জানানো হবে।পোপের মৃত্যু পর ক্যাথলিক চার্চে ৯ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়। সাধারণত মৃত্যুর চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ দিনের মধ্যে পোপকে সমাহিত করা হয়।

অধিকাংশ পোপকেই ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় সমাহিত করা হয়। তবে পোপ ফ্রান্সিস ২০২৩ সালে একটি সাক্ষাৎকারে রোমের সান্তা মারিয়া ম্যাগিওর ব্যাসিলিকায় তার দেহ রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।পোপকে সমাহিত করার আগে তার মরদেহ রাষ্ট্রীয়ভাবে শায়িত রাখা হয়, যাতে মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। ঐতিহ্য অনুযায়ী, পোপের মৃতদেহ প্রথমে সাইপ্রাস কাঠের একটি কফিনে রাখা হয়।এরপর সেটি সীসার তৈরি দ্বিতীয় কফিনে সিলমোহর করা হয়, যেখানে পোপের নাম ও তার কার্যকালের তারিখ খোদাই করা থাকে। সবশেষে, এলম কাঠের একটি তৃতীয় বাইরের কফিনের মধ্যে সেটি স্থাপন করা হয়।অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দায়িত্ব পালন করেন কার্ডিনাল ক্যামারলেনগো, যিনি হোলি সি-এর কোষাধ্যক্ষ হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি তিনি নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য কার্ডিনালদের সম্মেলন (কনক্লেভ) আহ্বান করেন।

কীভাবে বেছে নেওয়া হয় নতুন পোপ?

পোপের মৃত্যু এবং নতুন পোপ নির্বাচনের মাঝের সময়কে বলে ‘সেডে ভেকান্টে’। ল্যাটিন এই শব্দের অর্থ ‘দ্য সিট ইজ ভ্যাকেন্ট’ বা আসন খালি। এ সময়ের মধ্যে মৃত পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পাশাপাশি নতুন পোপ নির্বাচনও করা হয়।এ সময়ে কোনও পোপ না থাকায় চার্চ পরিচালনার ভার থাকে কলেজ অব কার্ডিনালসের হাতে। কার্ডিনাল ক্যামেরলেঙ্গো চার্চের এই সময়ের কাজের দেখাশোনা করেন। কলেজ অব কার্ডিনালসই নতুন পোপ বেছে নেওয়ার জন্য কনক্লেভের আয়োজন করেন।কনক্লেভে উপস্থিত থাকেন কার্ডিনাল ইলেক্টররা। মৃত পোপকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকেই কার্ডিনালরা এসে পৌঁছান ভ্যাটিকান সিটিতে।নিয়ম অনুযায়ী, পোপের মৃত্যুর ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কার্ডিনালদের অবশ্যই ভ্যাটিকানে পৌঁছতে হয়। তারা বিশেষভাবে নির্ধারিত বাসস্থানে অবস্থান করেন। নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য সম্মেলন পরিচালনা করেন এবং তারাই ভোট দিয়ে পরবর্তী পোপ নির্বাচিত করেন।পোপ নির্বাচনের জন্য ভ্যাটিকানে গোপন সম্মেলন বা কনক্লেভ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রায় ১২০ জন কার্ডিনাল ভোটদান প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। যদিও বিশ্বব্যাপী কার্ডিনালের সংখ্যা প্রায় ১৯৫, তবে ৮০ বছরের বেশি বয়সী কার্ডিনালদের ভোট দেওয়ার অনুমতি নেই।নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন কার্ডিনালরা ভ্যাটিকান প্রাসাদে জড়ো হন। নতুন পোপ নির্বাচিত করতে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। নির্ধারিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ভোট চলতে থাকে।

তবে যদি কার্ডিনালরা একমত হতে না পারেন, তাহলে ভোটগ্রহণ একদিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়, যাতে তারা প্রার্থনা ও আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে পারেন।দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেলে নির্বাচিত কার্ডিনালকে পোপ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তিনি জয় স্বীকার করলে পরবর্তী পোপ হন। আর যদি কোনও কার্ডিনাল দুই তৃতীয়াংশ ভোট না পান তখন সব ভোটের স্লিপ নির্দিষ্ট চুল্লিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়।সেই চুল্লির চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া দেখেই সবাই বুঝতে পারেন পোপ নির্বাচন হয়নি। তখন আবার একই প্রক্রিয়া শুরু হয়। পোপ নির্বাচনের জন্য এই ভোটাভুটি এবং আলোচনা সবই হয় একটি বন্ধ কক্ষে।পোপ নির্বাচন হয়ে গেলে শুরু হয় নাম ঘোষণার প্রক্রিয়া। ভ্যাটিক্যানে সেই সময়ের মধ্যেই জড়ো হয়ে যান প্রচুর মানুষ। ঊর্ধ্বতন কোনও কার্ডিনাল তখন পোপের নতুন নাম ঘোষণা করেন।

নতুন পোপ নতুন পোশাক পরে জনসম্মুখে আসেন। এরপর পরেন ‘ফিশারম্যান রিং’। ঈশ্বরের নামে শপথ নেওয়ার পর তিনি ভ্যাটিক্যানের ব্যালকনি থেকে ভাষণ দেন।


Chairman & Managing Director : Nasir Uddin

Director News & Broadcast : Zeker Uddin Samrat

 __________________________________________________________

MyTv Bhaban, 155, 150/3, Hatirjheel, Dhaka-1219

Phone. ☎ +880255128896 ; Fax. +880255128899

Email. news@mytvbd.tv