বিচার বিভাগ পৃথককরণের ১৭ বছর পর অবশেষে নিম্ন আদালতের বিচারকদের জন্য বদলি ও পদায়ন নীতিমালা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রণীত খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী একই কর্মস্থলে কোনো বিচারক তিন বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। রাজধানী ঢাকায় বিচারকের কর্মকাল ছয় বছরের বেশি হবে না। ঢাকায় কোনো পদে তিন বছর চাকরি করলে তাকে অবশ্যই রাজধানীর বাইরে পদায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা-বিধান এবং চাকরির অন্যান্য শর্তাবলী) বিধিমালা, ২০০৭ অধিক কার্যকর করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।নীতিমালায় ফিট লিস্ট প্রণয়ন করে সেখান থেকে জেলা ও দায়রা জজ এবং মহানগর দায়রা জজ পদে বিচারকদের পদায়ন করতে বলা হয়েছে। হত্যা মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় লেখার অভিজ্ঞতা এবং বিচার প্রশাসন চালানোর দক্ষতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জেলা ও মহানগর জজশিপের গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি পদে বিচারকদের পদায়ন করতে বলা হয়েছে। এখন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এই খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো কর্মস্থলে চাকরির কার্যকাল আড়াই বছর পূর্ণ হলে সংশ্লিষ্ট বিচারক বদলিযোগ্য হবেন। বদলিকৃত কর্মস্থলে যৌক্তিক কারণ ব্যতীত যোগদান না করে নিজের পছন্দমত স্থানে বা পদে বদলির জন্য বা জারিকৃত বদলির আদেশ বাতিলে তদবিরের আশ্রয় নিলে সংশ্লিষ্ট বিচারক অসদাচরণের দোষে দোষী হবেন। তখন ঐ বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে।নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, পার্বত্য এলাকা ও চৌকি আদালতের কর্মস্থলে কোনো বিচারককে দুই বছরের বেশি রাখা যাবে না। এসব কর্মস্থলে কোনো বিচারককে তার সম্মতি ব্যতিরেকে চার বছরের বেশি রাখার সুযোগ নাই। তবে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব পদের ক্ষেত্রে তিন বছর কর্মকালের শর্তের প্রয়োগ শিথিল করা যেতে পারে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়। কিন্তু গত ১৭ বছরেও নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়নের জন্য কোনো নীতিমালা নেই। বিচারকরা বলছেন, নীতিমালা না থাকার কারণে রাজনৈতিক সরকারের আমলে খেয়াল-খুশিমতো বিচারকদের বদলি/পদায়ন করা হয়েছে। এমনকি সরকারঘনিষ্ঠ অনেক বিচারক বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ বিচার বিভাগীয় পদে আসীন ছিলেন। ফলে অনেক মেধাবী ও যোগ্য বিচারকরা গুরুত্বপূর্ণ বিচার বিভাগীয় পদে পদায়িত না হয়ে বঞ্চিত হয়েছেন। অনেক বিচারক চাকরি জীবনে ১৭ বছরে একবারও ঢাকায় বদলি হয়ে আসার সুযোগ পাননি। অথচ অনেক বিচারক ঢাকায় একই জজশিপে ছয়/সাত বছর কাটিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে গত ২১ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে দেওয়া অভিভাষণে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ কার্যকররূপে পৃথক না হওয়ার কুফল গত দেড় দশক ধরে আমরা সবাই ভোগ করেছি। এছাড়াও অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য নীতিমালা না থাকায় অনেক সময় পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিচারকরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে একটি উপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়নের ঘোষণা দেন তিনি। এরপরই এ বিষয়ে কাজ শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রণয়ন করা হয় খসড়া নীতিমালা। বিচারকরা বলছেন, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে বিচারকদের হয়রানিমূলক বদলি ও পদায়ন বন্ধ হবে।
নীতিমালায় যা রয়েছে: বিচারকদের ফিট লিস্ট থেকে জেলা ও দায়রা/মহানগর দায়রা জজ পদে পদায়ন করতে বলা হয়েছে। ঐ ফিট লিস্ট সময় সময় হালনাগাদ করতে হবে। এই লিস্ট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিচারককে জেলা জজ হিসেবে কোনো ট্রাইব্যুনাল বা সমপর্যায়ের পদে ন্যূনতম তিন বছর এবং অতিরিক্ত জেলা জজ বা সমপর্যায়ের পদে দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। গ্রেডেশন তালিকা ও জ্যেষ্ঠতা যথাসম্ভব অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এছাড়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকদের মধ্যে থেকে চিফ জুডিশিয়াল/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করতে হবে। এই ফিট লিস্ট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিচারকের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কমপক্ষে তিন বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সর্বশেষ পাঁচ বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন, সার্ভিস রেকর্ড ও শৃঙ্খলাজনিত প্রতিবেদন সন্তোষজনক হতে হবে। কোনো বিচারকের স্বামী বা স্ত্রী চাকরিজীবী হলে তাদেরকে একই কর্মস্থলে অথবা নিকটবর্তী কর্মস্থলে/জেলায় পদায়ন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিচারকদের পদায়নের ক্ষেত্রে দেশের ৬৪ জেলাকে অবকাঠামোগত অবস্থা, চিকিৎসা ও শিক্ষাসংক্রান্ত সুবিধাদি, যোগাযোগব্যবস্থা, রাজধানী/বিভাগ হতে দূরত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় তিনটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘ক’ শ্রেণিতে ২৮টি, ‘খ’ শ্রেণিতে ১৫টি এবং ‘গ’ শ্রেণিতে ২১ জেলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নীতিমালায়। এই শ্রেণি অনুযায়ী বিচারকদের জেলায় পদায়ন করতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো কর্মস্থলে চাকরির কার্যকাল আড়াই বছর পূর্ণ হলে সংশ্লিষ্ট বিচারক বদলিযোগ্য হবেন। বদলিকৃত কর্মস্থলে যৌক্তিক কারণ ব্যতীত যোগদান না করে নিজের পছন্দমত স্থানে বা পদে বদলির জন্য বা জারিকৃত বদলির আদেশ বাতিলে তদবিরের আশ্রয় নিলে সংশ্লিষ্ট বিচারক অসদাচরণের দোষে দোষী হবেন। তখন ঐ বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে।নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, পার্বত্য এলাকা ও চৌকি আদালতের কর্মস্থলে কোনো বিচারককে দুই বছরের বেশি রাখা যাবে না। এসব কর্মস্থলে কোনো বিচারককে তার সম্মতি ব্যতিরেকে চার বছরের বেশি রাখার সুযোগ নাই। তবে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব পদের ক্ষেত্রে তিন বছর কর্মকালের শর্তের প্রয়োগ শিথিল করা যেতে পারে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়। কিন্তু গত ১৭ বছরেও নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়নের জন্য কোনো নীতিমালা নেই। বিচারকরা বলছেন, নীতিমালা না থাকার কারণে রাজনৈতিক সরকারের আমলে খেয়াল-খুশিমতো বিচারকদের বদলি/পদায়ন করা হয়েছে। এমনকি সরকারঘনিষ্ঠ অনেক বিচারক বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ বিচার বিভাগীয় পদে আসীন ছিলেন। ফলে অনেক মেধাবী ও যোগ্য বিচারকরা গুরুত্বপূর্ণ বিচার বিভাগীয় পদে পদায়িত না হয়ে বঞ্চিত হয়েছেন। অনেক বিচারক চাকরি জীবনে ১৭ বছরে একবারও ঢাকায় বদলি হয়ে আসার সুযোগ পাননি। অথচ অনেক বিচারক ঢাকায় একই জজশিপে ছয়/সাত বছর কাটিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে গত ২১ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে দেওয়া অভিভাষণে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ কার্যকররূপে পৃথক না হওয়ার কুফল গত দেড় দশক ধরে আমরা সবাই ভোগ করেছি। এছাড়াও অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য নীতিমালা না থাকায় অনেক সময় পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিচারকরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে একটি উপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়নের ঘোষণা দেন তিনি। এরপরই এ বিষয়ে কাজ শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রণয়ন করা হয় খসড়া নীতিমালা। বিচারকরা বলছেন, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে বিচারকদের হয়রানিমূলক বদলি ও পদায়ন বন্ধ হবে।
নীতিমালায় যা রয়েছে: বিচারকদের ফিট লিস্ট থেকে জেলা ও দায়রা/মহানগর দায়রা জজ পদে পদায়ন করতে বলা হয়েছে। ঐ ফিট লিস্ট সময় সময় হালনাগাদ করতে হবে। এই লিস্ট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিচারককে জেলা জজ হিসেবে কোনো ট্রাইব্যুনাল বা সমপর্যায়ের পদে ন্যূনতম তিন বছর এবং অতিরিক্ত জেলা জজ বা সমপর্যায়ের পদে দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। গ্রেডেশন তালিকা ও জ্যেষ্ঠতা যথাসম্ভব অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এছাড়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকদের মধ্যে থেকে চিফ জুডিশিয়াল/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করতে হবে। এই ফিট লিস্ট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিচারকের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কমপক্ষে তিন বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সর্বশেষ পাঁচ বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন, সার্ভিস রেকর্ড ও শৃঙ্খলাজনিত প্রতিবেদন সন্তোষজনক হতে হবে। কোনো বিচারকের স্বামী বা স্ত্রী চাকরিজীবী হলে তাদেরকে একই কর্মস্থলে অথবা নিকটবর্তী কর্মস্থলে/জেলায় পদায়ন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিচারকদের পদায়নের ক্ষেত্রে দেশের ৬৪ জেলাকে অবকাঠামোগত অবস্থা, চিকিৎসা ও শিক্ষাসংক্রান্ত সুবিধাদি, যোগাযোগব্যবস্থা, রাজধানী/বিভাগ হতে দূরত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় তিনটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘ক’ শ্রেণিতে ২৮টি, ‘খ’ শ্রেণিতে ১৫টি এবং ‘গ’ শ্রেণিতে ২১ জেলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নীতিমালায়। এই শ্রেণি অনুযায়ী বিচারকদের জেলায় পদায়ন করতে হবে।