মালভিনাস নামের ওপর আর্জেন্টিনার জেদ কেন একটি কৌশলগত সমস্যা?

আপলোড সময় : ১৩-০৩-২০২৫ ০৫:৩৭:০৬ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৩-০৩-২০২৫ ০৫:৩৭:০৬ অপরাহ্ন
মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্বের জটিল ইস্যুটি কয়েক দশক ধরে ব্রিটেন এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে বিশেষ করে ১৯৮২ সালে দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে যুদ্ধের পর সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই ব্রিটেনের কাছ থেকে দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করেছেন। পার্সটুডে আরও জানিয়েছে, মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে বিরোধ আরও তীব্র হয়েছে কারণ উপদ্বীপের নামকরণের জন্য কোম্পানিগুলিকে জরিমানা করার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

 

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সের একজন বিচারক একটি ট্রাভেল এজেন্সিকে উপদ্বীপে ভ্রমণের বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ নাম ফকল্যান্ডসের পরিবর্তে দ্বীপপুঞ্জের আর্জেন্টিনার নাম মালভিনাস ব্যবহার করার নির্দেশ দেন।

 

আর্জেন্টিনা এই দ্বীপপুঞ্জের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে এবং এগুলোকে মালভিনাস বলে। শিপিং কোম্পানি "S.R.L." তাদের ওয়েবসাইটে মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ জর্জিয়ায় ট্যুরের ব্যবস্থা করে। এই ট্রাভেল এজেন্সি পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য আর্জেন্টিনিয় নামের পরিবর্তে ইংরেজি নাম ব্যবহার করে। উপরন্তু, সংস্থাটি "পুয়ের্তো আর্জেন্টিনা" এর পরিবর্তে "পোর্ট স্ট্যানলি" নামটি ব্যবহার করে, আর্জেন্টিনা যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

 

বিচারক গিলারমো প্যাট্রিসিও ক্যানিওপা তার রায়ের সারসংক্ষেপে বলেছেন, আর্জেন্টিনার সংবিধানের সেই ধারাগুলির সাথে এগুলো সাংঘর্ষিক যা মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জের ওপর আর্জেন্টিনার বৈধ এবং অলঙ্ঘনীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে। সুতরাং এ ধরনের বিজ্ঞাপনগুলো অবৈধ বলে মনে করা হচ্ছে।

 

তিনি আরও বলেন যে, উপরে উল্লিখিত প্রচারণা আর্জেন্টিনার জনগণের জাতীয় মর্যাদার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং জাতীয় সংবিধানসহ উপরে উল্লিখিত আইন দ্বারা স্বীকৃত মূল্যবোধ ও অধিকারের সাথে এগুলো সাংঘর্ষিক।

 

ট্রাভেল এজেন্সিকে তাদের প্রচারমূলক উপকরণগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর্জেন্টিনার বিচারকের এই রায় এমন সময় এলো যখন তিয়েরা দেল ফুয়েগো প্রদেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ভ্রমণ সংস্থাগুলোকে দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণের বিজ্ঞাপনে ফকল্যান্ডস নাম ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা পাস হলে স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে প্রতিটি আইন লঙ্ঘনের জন্য ৭৬৪ পাউন্ডেরও বেশি জরিমানা করা হতে পারে।

 

মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ব্রিটেন এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। ব্রিটিশরা এই দ্বীপপুঞ্জকে ফকল্যান্ড বলে। বিরোধ ১৯৮২ সালে ফকল্যান্ডস যুদ্ধের দিকে গড়ায়। ওই যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার পরাজয়ের মাধ্যমে শেষ হয় এবং ব্রিটেন দ্বীপপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণ নেয়। কিন্তু চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ অব্যাহত রয়েছে।

 

ব্রিটেন যুদ্ধের সময় থেকেই দ্বীপপুঞ্জের আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিয়ে আলোচনা শুরুর বিরোধিতা করে আসছে। ফকল্যান্ড যুদ্ধের পর আর্জেন্টিনা এবং ব্রিটেন তাদের সম্পর্ক পুনর্নবীকরণ করলেও, দ্বীপপুঞ্জের আশেপাশের জলসীমায় ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর তেল অনুসন্ধান কার্যক্রমের কারণে আবারও দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়েছে।

 

২০১০ সালে লন্ডন তেল কোম্পানিগুলোকে দ্বীপপুঞ্জে খনন করার অনুমতি দেওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে ওঠে। বিশেষ করে মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা নিয়ে ওই উত্তেজনা দেখা দেয় এবং ব্রিটেন দ্বীপপুঞ্জগুলোতে তাদের যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে উত্তেজনা আরও চরমে তোলে।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অনেক পশ্চিমা দেশ দ্বীপপুঞ্জের ওপর ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করে, কিন্তু ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো এবং চীনসহ বিশ্বের অনেক দেশ মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জ পুনরুদ্ধারে আর্জেন্টিনার অনুরোধকে সমর্থন করে।

 

এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প যেহেতু ঐতিহাসিক ও আদি নাম পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছে, যেমন মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকা উপসাগর রাখা, সেই পরিপ্রেক্ষিতে ল্যাটিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের জন্য আর্জেন্টিনার পদক্ষেপ তাদের জাতীয় ও ঐতিহাসিক পরিচয় সংরক্ষণের একটি মডেল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।


Chairman & Managing Director : Nasir Uddin

Director News & Broadcast : Zeker Uddin Samrat

 __________________________________________________________

MyTv Bhaban, 155, 150/3, Hatirjheel, Dhaka-1219

Phone. ☎ +880255128896 ; Fax. +880255128899

Email. news@mytvbd.tv