আলোচনায় ৬৬ বছরের শরিফুলের সঙ্গে কলেজ ছাত্রী আইরিনের বিয়ে

আপলোড সময় : ২৭-০৩-২০২৫ ০৪:৪৫:২৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৭-০৩-২০২৫ ০৪:৪৫:২৪ অপরাহ্ন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, পাঞ্জাবি ও টুপি পরা ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি নববধূর মুখে মিষ্টি তুলে দিচ্ছেন। বয়সের হিসেবে ৪৪ বছরের পার্থক্য এই নবদম্পতিকে দেখে অনেকেই ভ্রু কুঁচকিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম।

১০ লাখ টাকা মোহরানায় গত ২২ মার্চ লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভার দক্ষিণ কোর্টতলি রসুলগঞ্জ এলাকার শরিফুল ইসলাম প্রধানের সঙ্গে একই উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের নজরুল ইসলামের মেয়ে আইরিন আক্তারের বিয়ে হয়। শরিফুলের বয়স এখন ৬৬ বছর। রংপুরের একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী আইরিনের বয়স এখন ২২ বছর। অসম বিয়ের এ ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইরিন আক্তারের সঙ্গে বৃদ্ধ শরিফুল ইসলামের দীর্ঘদিনের পরিচয়। আইরিন আক্তার টাঙ্গাইলের একটি নার্সিং কলেজে পড়াশোনা করেন। আইরিনের পড়াশোনার সব খরচ বহন করছেন শরিফুল। তার পড়াশোনার খরচ বহন করতে ব্যাংকের ছয় লাখ টাকা ডিপোজিট করেছেন তিনি। সেই টাকার প্রতিমাসের লভ্যাংশ তুলে আইরিন আক্তারের পড়াশোনার চালান।

 


আইরিন বলেন, ‘আমার পরিবারের অবস্থা ভালো ছিল না। চতুর্থ শ্রেণী থেকে উনিই (শরিফুল) আমাকে সহায়তা করে আসছেন। পড়াশোনার খরচ, বই, এমনকি কলেজে ভর্তি সবই উনি সামলেছেন। শরিফুল এতটাই দায়িত্ব নিয়ে পাশে ছিলেন যে, আমার পড়াশোনা যাতে থেমে না যায় সেজন্য তিনি ব্যাংকে ছয় লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। ওই টাকা দিয়েই চলছিল আমার পড়াশোনা।’

এ তরুণী বলেন, ‘একটা সময় পরিবার আমার বিয়ের চিন্তা শুরু করে। আমার মনে ভয় ছিল, বিয়ের পর হয়তো পড়াশোনা থেমে যাবে। হয়তো কেউই আমারে এমনভাবে বুঝবে না, পাশে থাকবে না যেভাবে শরিফুল থেকেছেন। তখনই মনে হলো, যার সঙ্গে আমি সব সময় নির্ভার থাকতে পেরেছি তিনি-ই যদি আমার জীবনসঙ্গী হন, তাহলে আমার স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকবে।’

স্থানীয়রা জানান, ১৫ বছর আগে শরিফুল ইসলামের স্ত্রী মারা যান। তখন থেকেই তিনি একা হয়ে পড়েন। এলাকায় বৃদ্ধ শরিফুল ইসলাম কারও ‘দাদা’ আবার কারও ‘নানা’ হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রথমে শরিফুল রাজি ছিলেন না। আইরিনের প্রস্তাবে অবাক হয়েছিলেন, ছিলেন দ্বিধায়। কিন্তু আইরিনের দৃঢ়তা আর আন্তরিকতা তাকে টেনে আনে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত পারিবারিক সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু আইরিন আর শরিফুলের বিয়ের ছবি, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

বৃদ্ধ শরিফুল ইসলাম বলেন, আইরিন ছোট থেকেই অনেক মেধাবী। আমি তার পড়াশোনায় সহায়তা করছি। সে আমাকে নানা বলে ডাকে। সে আমাকে হুট করে বিয়ে করবে বলে। আমি ভাবতেই অবাক হয়েছি। আমি হতবাক হয়ে কয়েকদিন তাকে বোঝার সময় দিয়েছি। কিন্তু সে কোনোভাবেই মানেনি। আমাকেই সে বিয়ে করবে। তাই আমি বাধ্য হয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয়।

পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মামুন হোসেন সরকার বলেন, বিয়ে-শাদির জন্য বয়স কোনো ব্যাপার না। মনটাই বড় কথা। এখানে তাদের বিয়ে নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বললেও আমি মনে করি শরিফুলের প্রতি আইরিনের শ্রদ্ধা সব সমালোচনাকে হার মানিয়েছে।


অফিস :

MyTv Bhaban, 155, 150/3, Hatirjheel, Dhaka-1219

Phone. ☎ +880255128896 ; Fax. +880255128899

Email. admin@mytvbd.tv