
বিশ্বব্যাপী ট্রাম্পের শুল্ক ঝড়ে বিপাকে পড়তে শুরু করেছেন খোদ মার্কিনরাই। হুমড়ি খেয়ে কিনছেন নিত্যপণ্য। ব্যবসা টিকে থাকবে কিনা, সেই আশঙ্কায় দিন পার করছে মেক্সিকো, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্কারোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে কয়েকদিনেই যে প্রভাব পড়েছে, তা আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে বিশ্ব মন্দার কথা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাগলামি যেন শনি ডেকে আনছে সাধারণ মার্কিনদের ওপর। নজিরবিহীন শুল্ক ঝড়ে ওলটপালট করে দিচ্ছেন বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতি। ট্রাম্পের এমন শুল্কনীতির চক্করে পড়ে নিত্যপণ্যের দর বাড়বে, এমন আশঙ্কায় দোকানপাটে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন মার্কিনরা। মূল্যস্ফীতি আর মন্দা আতঙ্কে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে মজুত করছেন তারা।
২০২৪ সালে ভিয়েতনামের কাছ থেকে ১৩ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কারখানা কর্মীরা বলছেন, পারস্পরিক শুল্কারোপে দেশের কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ১৩ হাজার কিলোমিটার দূরে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাহকদের পকেটেও পড়বে সেই প্রভাব।
যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যগুলোর শীর্ষে রয়েছে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, গাড়ি, জীবাশ্ম জ্বালানি, জ্বালানি তেল, মূল্যবান ধাতুসহ আরও অনেক পণ্য। এরমধ্যে ২০২৪ সালে মেক্সিকো থেকে ৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের গাড়ি আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। লোকসান হলেও বেশিরভাগ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেক্সিকো থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার বিপক্ষে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পারস্পরিক শুল্কারোপে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে টালমাটাল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেই ভার বইতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকেও। অচল হয়ে পড়তে পারে মার্কিন অর্থনীতি। শুল্কারোপের কয়েকদিনের মধ্যেই যে আশঙ্কা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
জর্জ ডব্লিউ বুশ ফাউন্ডেশন ফর ইউএস-চায়না রিলেশনসের প্রধান নির্বাহী ডেভিড ফায়ারস্টেইন, ‘দুই কার্যদিবস তো দেখলাম। বুধবার শুল্ক ঘোষণার পর শেয়ার বাজার থেকে ৬ লাখ কোটি ডলার ওয়াইপ আউট হয়ে গেলো। ইতিহাসে এমন আগে হয়েছে কিনা জানা নেই। মনে হচ্ছে গ্রেট ডিপ্রেশনের সময় চলে গেছি। নিজেকে নিজের আঘাত করার মতো অবস্থা হয়েছে। কোন দেশের প্রেসিডেন্টই দেশের এতো ক্ষতি করে না।’
সাবেক কূটনীতিকরা বলছেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক গতি প্রকৃতি অস্থিতিশীল করতেই এতোগুলো দেশের ওপর অস্বাভাবিক শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প। এই শুল্ক পুরো বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে। ফলে, ঝুঁকিতে পড়বে খোদ মার্কিনরাই।যদিও, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর বলছে, ট্রাম্পের পুরো মেয়াদে শুল্কারোপমুক্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
কারণ ১ লাখ কোটি ডলারের ওপরে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার কানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়া।বাণিজ্যিক অংশীদার সব দেশের ওপর সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে ৬০ টিরও বেশি দেশের ওপর পারস্পরিক শুল্কারোপ কার্যকর হয়েছে বুধবার থেকে।