রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে কাটছাঁট করছে যুক্তরাষ্ট্র

আপলোড সময় : ১৪-০৪-২০২৫ ০৫:০১:৪৮ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৪-০৪-২০২৫ ০৫:০১:৪৮ অপরাহ্ন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন খাতে আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধের পর বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবে সম্প্রতি দেশটির রোহিঙ্গাদের জন্য ৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের অর্থ ছাড় করলেও আগামী দিনে মার্কিন অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, আপাতত রোহিঙ্গাদের জন্য পুরোপুরি অর্থায়ন বন্ধের পরিকল্পনা না থাকলেও অর্থায়ন কমাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে কাটছাঁট করবে দেশটি। চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের দুই জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা ঢাকা সফরে এসে এমন বার্তা দেবেন বলে আভাস দিয়েছে একাধিক সূত্র।


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চার দিনের সফরে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকায় আসছেন মার্কিন দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল এন চুলিক। একদিনের ব্যবধানে দেশটির পূর্ব ও প্যাসিফিক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এন্ড্রু হেরাপ এবং মিয়ানমারে নিযুক্ত মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসনও ঢাকায় আসবেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল চুলিক হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সফরকারী যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের প্রথম কোনো প্রতিনিধি।


চুলিকের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দলটির অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকার বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বা পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ড. ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ চাওয়া হলেও সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে শেষ অবধি মার্কিন প্রতিনিধি দলটি সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ পেতে পারে বলে জানা গেছে।এ ছাড়া বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে চুলিকের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধি দলের।


মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফরের অ্যাজেন্ডা নিয়ে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বৈঠকগুলোতে ঢাকার পক্ষে বাংলাদেশি পণ্যে মার্কিন শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গ, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার অগ্রগতি, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক উত্তরণে মার্কিন সহায়তা চাওয়া হতে পারে।অন্যদিকে, ওয়াশিংটনের অ্যাজেন্ডায় থাকছে মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতিসহ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ, এক্ষেত্রে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিবেচনায় উভয়পক্ষ দেশটি নিয়ে যার যার অবস্থান জানতে চাইতে পারে। এ ছাড়া অবৈধ অভিবাসী ফেরতসহ ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্কের ধরন এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি আলোচনার টেবিলে রাখতে পারেন ট্রাম্পের কর্মকর্তারা।

স্থানীয় এক কূটনীতিক বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফরে স্বাভাবিকভাবে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। আমাদের মূল ফোকাস হবে ট্যারিফ বা শুল্ক প্রসঙ্গ। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের ফলে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে দেশটি থেকে আমদানি বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। পারস্পরিক বাণিজ্যকে আরও লাভবান করতে সরকার যেসব সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন কর্মকর্তাদের যে বিষয়গুলো জানানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর বাইরে সরকারের সংস্কার উদ্যোগ ও নির্বাচন নিয়ে কথা আসবে।



এই কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দিকে থেকে মূল ফোকাস হবে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার পরিস্থিতি। আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিবেচনায় মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইতে পারে মার্কিন প্রতিনিধি দল। রাখাইনসহ মিয়ানমারের অনেক এলাকা মিয়ানমারের জান্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এর মধ্যে সামনে মিয়ানমারের নির্বাচন; সেটিও আলোচনায় আসতে পারে। সঙ্গে রোহিঙ্গাদের তহবিলের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান জানাতে পারে। এ ছাড়া অবৈধ অভিবাসীদের ফেরানোর বিষয়টি তারা তুলতে পারে।


কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দৃশ্যমান। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফর করেছেন। ইতোমধ্যে ওয়াশিংটন এ সফর সম্পর্কে ঢাকার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়েছে। ঢাকার পক্ষ থেকে তার জবাবও দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জানান, এই সফরের মূল ইস্যু রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন কমাবে। আমরা শুনতে পাচ্ছি, মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে এসে এই বার্তা দেবে। কিন্তু অর্থায়ন কতটা কমবে বা ট্রাম্প প্রশাসনের রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, সেটি সম্পর্কে হয়ত এই সফরে ধারণা পাওয়া যাবে। এ বছর না হলেও আগামী বছরের শুরুতে মিয়ানমারে নির্বাচন হওয়ার কথা। মিয়ানমারের নির্বাচন নিয়েও তারা কথা বলবেন। মিয়ানমারের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া-পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পাশে চাইবেন।


জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ট্রাম্প তার কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাজেন্ডা নিয়ে ঢাকায় পাঠাচ্ছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা ঢাকায় এলে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে উভয়পক্ষ সরাসরি কথা বলার সুযোগ পাবে। আমরা শুনতে পাচ্ছি, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ে প্রতিনিধি দল কথা বলতে চান। ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। সম্প্রতি তিনি আবার ঘোষণা দিয়ে ১০ শতাংশ রেখে বাকি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। আমার মনে হয়, আমাদের দিক থেকে শুল্কের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিদেশি সহায়তা এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সহায়তা হিসেবে ২৪০ কোটি ডলার দিয়েছে ওয়াশিংটন।


Chairman & Managing Director : Nasir Uddin

Director News & Broadcast : Zeker Uddin Samrat

 __________________________________________________________

MyTv Bhaban, 155, 150/3, Hatirjheel, Dhaka-1219

Phone. ☎ +880255128896 ; Fax. +880255128899

Email. news@mytvbd.tv