
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যখন রাজপথে উত্তাল পরিস্থিতি, রাজধানী জুড়ে গুলি, টিয়ারশেল আর লাঠিচার্জে কাঁপছিল শহর—ঠিক তখনই বিতর্কিত ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলে উদযাপন করছিলেন ছেলের গ্র্যাজুয়েশন পার্টি।
জানা গেছে, সেরাটনের ১২ তলার বলরুমে ঝলমলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মাত্র ক’কিলোমিটার দূরেই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা হারাচ্ছিল চোখ, হাত আর ভবিষ্যৎ।
পরিস্থিতি ঘনিয়ে এলে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের দুদিন আগে, ৩ আগস্ট সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান শেখ তাপস। যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ হলেও, পরিবারকে পাঠিয়ে দিয়ে একাই ধরেন সিঙ্গাপুরগামী ফ্লাইট। সেখানে দীর্ঘ সময় ভিসাবিহীন অবস্থান করার পর, অবশেষে যুক্তরাজ্যে চলে যান।
বর্তমানে পরিবারসহ লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন তিনি। বড় ছেলে লন্ডনে এবং ছোট ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বলে জানা গেছে।
তাপসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে—হাজার কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এমনকি পিলখানা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগও উড়েছে তার দিকে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নিহত মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ দাবি করেন, ওই ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন তাপস।
২০২৩ সালে ডেইলি স্টারের একটি রম্য লেখার জেরে সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানি নোটিশ পাঠিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।
এর আগে, রাতের আঁধারে গাছ কাটার নির্দেশ দিয়ে সাতমসজিদ সড়কে সমালোচিত হন তাপস। পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গাছ কাটার বিরোধিতা করতে গেলে তাকে নগর ভবনে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। পরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে গাছ কাটা বন্ধ করা হয়।
২০২১ সালে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের অভিযোগ ছিল, দক্ষিণ সিটির শত শত কোটি টাকা নিজের মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করে তাপস কোটি কোটি টাকা লাভ করেছেন।
তবে এসব বিতর্কের জবাবে তাপস বলেছিলেন, “মন চায় আবার ইস্তফা দিয়ে ফিরে আসি, কোথায় মুগুর মাড়তে হয় সেটা আমি জানি।”
২০২৩ সালে তিনি দাবি করেন, এক প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দিয়েছেন এবং সমালোচকদের নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন—যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়।