দুদিনের অসুস্থতা ছুটির জন্য লাগবে না চিকিৎসা সনদ

আপলোড সময় : ০১-০৫-২০২৫ ০৫:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০১-০৫-২০২৫ ০৫:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন
অসুস্থতার ছুটি গ্রহণের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা দূর করতে এবং অসুস্থতা ছুটি দুদিনের বেশি না হলে চিকিৎসা সনদ দাখিলের প্রয়োজন হবে না মর্মে শ্রম আইনে বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে শ্রম কমিশন। একই সঙ্গে শ্রমিকরা যদি মজুরি না পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়, তবে সেটাকে অবৈধ ধর্মঘট হিসেবে গণ্য না করার সুপারিশ করা হয়েছে।



বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদের নেতৃত্বাধীন ১৮ সদস্যের শ্রম সংস্কার কমিশন এসব সুপারিশ করেছে। ‘শ্রম জগতের রূপান্তর-রূপরেখা: শ্রমিক অধিকার, সুসমন্বিত শিল্প সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন।





শ্রমিকের চাকরির আইনগত সুরক্ষা ও নিশ্চয়তার লক্ষ্যে করা কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র অথবা কাজে নিয়োজিত করার প্রমাণপত্র প্রদান বাধ্যতামূলক করা হবে। যদি লে-অফ (সাময়িক কর্মবিরতি) ১৫ দিনের বেশি হয় তাহলে লে-অফ চলাকালে শ্রমিকদের প্রতিদিন কর্মস্থলে হাজির হওয়ার বাধ্যবাধকতার শর্ত বাতিল করা এবং লে-অফ চলাকালে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।

 


এ বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিধান সংশোধন করে নিশ্চিত করা যে, অবৈধ ধর্মঘটে জড়িত না থাকা শ্রমিকরা মজুরি বা লে-অফ ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হবে না। শ্রমিকরা যদি মজুরি না পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়, তবে সেটাকে অবৈধ ধর্মঘট হিসেবে গণ্য না করা। আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা যে, নির্দিষ্ট সময়ে মজুরি না পাওয়ার কারণে কাজ বন্ধ রাখা কোনোভাবেই আইনবহির্ভূত নয় এবং অনুরূপ কারণে তাদের কোনো সুবিধা কাটছাঁট না করা।অসুস্থতার ছুটির বিষয়ে বলা হয়েছে, অসুস্থতার ছুটি গ্রহণের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা দূর করা এবং অসুস্থতা ছুটি দুদিনের বেশি না হলে চিকিৎসা সনদ দাখিলের প্রয়োজন হবে না মর্মে শ্রম আইনে বিধান যুক্ত করা।


দুদিনের অসুস্থতা ছুটির জন্য চিকিৎসা সনদ লাগবে না

অসদাচরণ সংক্রান্ত তদন্তের বিদ্যমান ব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে না বিধায় এ প্রক্রিয়ায় শ্রমিক ও নিয়োগকারী উভয়ই যেন প্রয়োজনে প্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করতে পারে সে জন্য শ্রম আইনের পর্যালোচনা করে একটি কার্যকর ব্যবস্থার বিধান রাখার সুপারিশ করেছে কমিশন।



অসুস্থতা বা স্বাস্থ্যগত কারণে ডিসচার্জের ক্ষেত্রে চাকরি অবসানের ন্যায় শ্রমিকদের চার মাসের মজুরি প্রদান করা এবং প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী বন্ধের কারণে চাকরির অবসানের ক্ষেত্রে চার মাসের নোটিশ বা নোটিশ পে প্রদান করার সুপারিশ করেছে কমিশন।




বেকারত্বকালীন সুরক্ষা ও প্রশিক্ষণ
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শ্রমবাজারে প্রবেশের ছয় মাসের মধ্যে চাকরি না পেলে কাজের সুযোগ তৈরি করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও বৃত্তিমূলক কাজে নিযুক্ত করে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিক্ষানবিশ ভাতা চালু করা। বেকার শ্রমিক নতুন চাকরি না পাওয়া অবধি রি-স্কিলিং (পুনঃদক্ষতা) ও আপ-স্কিলিংয়ের (উচ্চতর দক্ষতা) উদ্যোগ গ্রহণ করে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেকার ভাতা চালুর সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।

একই সঙ্গে সব শিল্প, খাত, বিশেষায়িত শ্রম অঞ্চল, কর্মসংস্থানের ধরন, প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক, লাভজনক বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে আইন অনুযায়ী, ৮ ঘণ্টা কাজের সময় কার্যকর করা। পুনর্বাসন পরিকল্পনার আওতায় বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত না করে আইন প্রয়োগের প্রয়োজনে জীবিকার উপকরণ যেমন মাছ ধরার জাল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ফুটপাতের দোকান ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে বিনষ্ট না করার বিধান চালুর সুপারিশও করেছে কমিশন।


সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ
সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণের লক্ষ্যে সব শ্রমিকের জন্য ‘জীবন-চক্রভিত্তিক’ সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের কর্মজীবন, অবসরকাল ও ভবিষ্যতের সুরক্ষা এবং শ্রমিক ও তার পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ‘অধিকার ও জীবন-চক্রভিত্তিক’ সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং এ লক্ষ্যে সব শ্রমিকের (প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, স্বনিয়োজিত, কৃষি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে নিয়োজিত) জন্য একটি সমন্বিত সামাজিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও একটি বাধ্যতামূলক সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল গঠন করা, যেখানে নিয়োগকারী, সরকার ও শ্রমিকরা যৌথভাবে অবদান রাখবে।



সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণ কর্মসূচির আওতা
এই আইনের কাঠামোর আওতায় সর্বজনীন জীবন-চক্রভিত্তিক সামাজিক বিমা বা সুরক্ষা কর্মসূচি, সর্বজনীন মাতৃত্ব সুরক্ষা ও কল্যাণ, আকস্মিক কর্মহীনতা সুরক্ষা এবং চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, স্বনিয়োজিত, কৃষি, প্রবাসী, ফ্রিল্যান্সার ও সামাজিক প্ল্যাটফর্ম কর্মীসহ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে নিয়োজিত সব শ্রমিকের জন্য নিশ্চিত করা।



প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের জন্য সুবিধা
এই নীতিমালায় শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা এবং সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রভিডেন্ট ফান্ড বাধ্যতামূলক করা যেখানে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ঐচ্ছিক থাকবে। কর্মস্থল পরিবর্তন হলে শ্রমিকরা তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড স্থানান্তর করতে পারবেন। জাতীয় পেনশন স্কিমের আওতায় প্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য কারখানা/প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে শ্রমিকবান্ধব স্কিম চালু করা এবং অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান/কারখানাকে সরকার কর্তৃক বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করা। কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে এবং আকস্মিক কর্মহীনতার জন্য কিছু সময় পর্যন্ত ভাতা প্রদান করা হবে। এছাড়া সর্বজনীন মাতৃত্বকালীন সুবিধা নিশ্চিত করা হবে, যার আওতায় ন্যূনতম ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও পূর্ণ বেতন, ডে কেয়ার সুবিধা এবং মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে বৈষম্যমুক্ত কর্মস্থল নিশ্চিত করা হবে।



অপ্রাতিষ্ঠানিক, স্বনিয়োজিত ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প শ্রমিকদের জন্য বিশেষ পেনশন স্কিম চালু করা, যা বিমা সুবিধার আওতায় থাকবে এবং শ্রমিকের আয় অনুসারে কন্ট্রিবিউটরি, নন-কন্ট্রিবিউটরি বা ভলান্টারি হতে পারে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, প্রান্তিক শ্রমিকদের পেনশনের চাঁদা সরকার ও নিয়োগকারী যৌথভাবে বহন করবে। এসব শ্রমিকের জন্য পৃথক বিমা কর্মসূচি প্রণয়ন করা, যেখানে কর্মক্ষমতা হারালে আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসা সেবা, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে। শ্রমিকদের আকস্মিক কর্মহীনতার জন্য একটি সময়সীমা পর্যন্ত ভাতা প্রদান করা এবং ন্যূনতম ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও পূর্ণ বেতন নিশ্চিত করার পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করা, যা সরকারি সহায়তা ও নিয়োগকারীর যৌথ তহবিলের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা যাবে।

ফ্রিল্যান্সারসহ গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের সুরক্ষা
ফ্রিল্যান্সারসহ গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের সুরক্ষার জন্য গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের শ্রম আইন এবং বিধিবিধানের আওতায় আনা, যাতে তারা সামাজিক সুরক্ষা, মজুরি সুরক্ষা ও শ্রম অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারেন।

অভিবাসী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা
বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে পেনশন, বিমা ও পুনর্বাসন সুবিধা।

দুদিনের অসুস্থতা ছুটির জন্য চিকিৎসা সনদ লাগবে না

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ ও সুরক্ষা
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ ও সুরক্ষায় বেশি কিছু সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে,

>> বর্তমান ক্ষতিপূরণের পরিমাণ অপ্রতুল বিধায়, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে একটি সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ এবং একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটির মাধ্যমে আইএলও কনভেনশন ১২১ ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড নির্ধারণ করা।

>> দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার পর শ্রমিকদের জন্য চিকিৎসা সুবিধা ও দীর্ঘমেয়াদি ভাতা নিশ্চিত করা। প্রতিবন্ধী ও দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের জন্য আজীবন চিকিৎসা, ভরণপোষণ এবং পুনর্বাসন ব্যবস্থা প্রদান।

>> সব খাত এবং সব শ্রমিকের জন্য দুর্ঘটনা বিমা/এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম বাধ্যতামূলক করা এবং এজন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন করা।

>> দুর্ঘটনায় মৃত অথবা আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারানো শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, যতদিন না তারা উপার্জনক্ষম হয়। এসব শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের জন্য চাকরিপ্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি প্রণয়ন।


>> শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ও কেন্দ্রীয় তহবিলের জন্য ডিজিটাল আবেদন পদ্ধতি চালু করা এবং তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য ত্রিপক্ষীয় নিরীক্ষা এবং মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা। কল্যাণ সুবিধার আওতা বৃদ্ধি করে সব খাতের শ্রমিককে (প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, স্বনিয়োজিত, গিগ/অ্যাপবেজড কর্মী) অন্তর্ভুক্ত করা এবং শ্রমিকদের পরিবারের জন্য সহায়তার পরিধি বৃদ্ধি করে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন সংশোধন করা।


Chairman & Managing Director : Nasir Uddin

Director News & Broadcast : Zeker Uddin Samrat

 __________________________________________________________

MyTv Bhaban, 155, 150/3, Hatirjheel, Dhaka-1219

Phone. ☎ +880255128896 ; Fax. +880255128899

Email. news@mytvbd.tv