ক্যামেরুনের ৯২ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট, যিনি কখনো পরাজিত হননি

আপলোড সময় : ২৯-১০-২০২৫ ০১:২৫:০৭ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৯-১০-২০২৫ ০১:২৫:০৭ অপরাহ্ন
বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ রাষ্ট্রপ্রধান ৯২ বছর বয়সী পল বিয়া অষ্টমবারের মতো আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন—দেশটির সাংবিধানিক কাউন্সিল এ ঘোষণা দিয়েছে।প্রত্যাশিতভাবেই বিয়ার জয় হয়েছে, যদিও ভোটের ফল ঘোষণার আগে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মন্ত্রী ইসা চিরোমা বাকারি দাবি করেছিলেন, তিনি এগিয়ে আছেন।সোমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিনের ফল ঘোষণার আগে রাজধানী ইয়াউন্ডে উত্তেজনা ছড়ালেও শেষ পর্যন্ত ফলাফল অনেকের কাছে ‘চেনা এক বিস্ময়’ হয়ে এসেছে।সরকারি ফলাফল অনুযায়ী, বিয়া পেয়েছেন ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট আর বাকারি ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ।টানা ৪৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বিয়ার সপ্তম মেয়াদের পর আবারও প্রার্থী হওয়া নিয়েই দেশজুড়ে চলছিল সমালোচনার ঝড়। শুধু বয়সের কারণে নয়, তার শাসনপদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বহুবার।বেশিরভাগ সময়ই তিনি দেশের বাইরে, বিশেষ করে সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল বা আশপাশের এলাকায় অবস্থান করেন—এমন খবর ঘুরে ফিরে আসে গণমাধ্যমে। এতে ধারণা তৈরি হয়েছে, বাস্তবে দেশ পরিচালনার বেশিরভাগ কাজ করেন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য বা প্রেসিডেন্টের দপ্তরের প্রভাবশালী সচিব ফার্দিনান্দ এনগোহ এনগোহ।





বিবিসি লিখেছে, গত বছর অগাস্টে ফ্রান্সে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর এবং পরের মাসে চীন-আফ্রিকা সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রায় ছয় সপ্তাহ লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন বিয়া। তখন তার স্বাস্থ্য নিয়েও তৈরি হয়েছিল নানান জল্পনা। পরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সমর্থকদের অভ্যর্থনা নেওয়ার দৃশ্য প্রকাশ করে জানানো হয়, তিনি ‘কাজে ফিরে এসেছেন’।এ বছর নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে আবারও জেনিভা সফর করেন তিনি।তার শাসনের ধরন অনেকটা ‘নীরব রাজনীতি’। খুব কমই মন্ত্রিসভার পূর্ণাঙ্গ বৈঠক ডাকেন, জনসমক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বক্তব্য দেন না। ফলে প্রশাসনের দিকনির্দেশনা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।যদিও অভ্যন্তরীণভাবে দক্ষ মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা নানা উন্নয়ন প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা উন্নয়ননীতি দেখা যায় না।




বিক্ষোভ দমন ও বিরোধীদের গ্রেপ্তারে কঠোরতা দেখালেও এটিই তার ক্ষমতায় থাকার একমাত্র কারণ নয়।দেশের ভাষাগত ও আঞ্চলিক বিভাজন সামাল দিতে ভারসাম্য রক্ষাকারী নেতার ভূমিকায়ও ছিলেন বিয়া। ফরাসি ও ইংরেজিভাষী অঞ্চলগুলোর মধ্যে সংঘাত এড়াতে তিনি সরকারে নানা পটভূমির মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের চাপে পড়েও তিনি দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়তে দেননি, বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্থিক শৃঙ্খলা জোরদার করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কামরুনের প্রেসিডেন্ট পল বিয়াকে যেন এক ধরনের সাংবিধানিক রাজা হিসেবেই দেখা যাচ্ছে— একজন প্রতীকী শাসক, যিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন ঠিকই, কিন্তু অধিকাংশ নীতিগত দিকনির্দেশনা নির্ধারণের দায়িত্ব অন্যদের ওপরই ছেড়ে দেন।





শাসক দল ক্যামেরুন পিপলস ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (সিপিডিএম)-এর শীর্ষ নেতাদের পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাই আসলে বিয়ার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পথ সহজ করেছে। যতদিন তিনি আছেন, উত্তরসূরি নির্ধারণের প্রশ্নটি ততদিনই অনির্দিষ্ট থেকে যাচ্ছে।তবে উত্তরসূরির নাম ঘোষণা না করায় নানা জল্পনা চলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার ছেলে ফ্রাঙ্ক বিয়ার নামও শোনা যাচ্ছে, যদিও তিনি রাজনীতিতে আগ্রহী নন।এদিকে দেশজুড়ে উন্নয়ন ঘাটতি ও নিরাপত্তা সংকটও গভীর হয়েছে। বিশেষ করে ইংরেজিভাষী উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে সহিংসতা বেড়েছে।২০১৬ সালে যখন প্রথম সংস্কারের দাবিতে ওই অঞ্চলে বিক্ষোভ শুরু হয়, বিয়া ব্যবস্থা নিতে বেশ দেরি করেন। পরে যখন তিনি ‘জাতীয় সংলাপ’ ও কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব দেন, ততদিনে সহিংসতা এতটাই বেড়ে যায় যে আপসের সুযোগই ফুরিয়ে আসে।২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধী নেতা মরিস কামতোকে হারিয়ে সপ্তম মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন বিয়া। পরে ফল নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কামতোকে আট মাসের বেশি কারাভোগ করতে হয়।






কিন্তু এবার তচিরোমা বাকারির প্রার্থিতা নতুন উদ্দীপনা তৈরি করে। উত্তরাঞ্চলের এই মুসলিম রাজনীতিক প্রথমবারের মতো বিভিন্ন অঞ্চলের সমর্থন পেয়েছেন, এমনকি ইংরেজিভাষী অঞ্চলগুলো থেকেও।ফল ঘোষণার আগে উত্তেজনার মধ্যে বাকারি নিজ শহর গারুয়াতে অবস্থান করেন, যেখানে সমর্থকেরা তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছিল।কিন্তু সোমবার রাতে ফল ঘোষণার পর থেকেই রাজধানী ইয়াউন্ডে, অর্থনৈতিক কেন্দ্র দুয়ালা এবং গারুয়ায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে হতাহতের খবরও এসেছে।






বিয়ার অষ্টম মেয়াদ নিশ্চিত হলেও ক্যামেরুন এখন এক কঠিন সময়ের মুখে দাঁড়িয়ে। ৯২ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে দেশটির ভবিষ্যৎ যেন অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।


অফিস :

MyTv Bhaban, 155, 150/3, Hatirjheel, Dhaka-1219

Phone. ☎ +880255128896 ; Fax. +880255128899

Email. admin@mytvbd.tv