নন-কমপ্লায়েন্ট কারখানা বন্ধ হওয়া দেশের জন্য খারাপ কিছু নয়: প্রেস সচিব

আপলোড সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০৩:৪৩:২৮ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০৩:৪৩:২৮ অপরাহ্ন
শেষ এক বছরে দেশের ২৫৮টি রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজেএমইএ। যার ফলে পরোক্ষভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করা হয়। তবে সে অভিযোগের একটা জবাব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে এ জবাব দেন।এই পোস্টে তিনি তুলে ধরেন ৯০ দশকের কারখানার চিত্র। তিনি বলেন, ‘একসময় বাংলাদেশে পাঁচ হাজারেরও বেশি তৈরি পোশাক কারখানা ছিল। এই রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) প্ল্যান্টগুলোর অনেকগুলোই আবাসিক এলাকায় কার্যক্রম চালাত। প্রায়শই এক ভবনে একাধিক কারখানা থাকত, যার প্রতিটিতে ১০০ থেকে ৫০০ শ্রমিক কাজ করত। যেমন, সেই দুর্ভাগ্যজনক রানা প্লাজা কমপ্লেক্সটিতে এমন পাঁচটি কারখানা ছিল, যার মধ্যে ফ্যান্টম অ্যাপারেলস নামে ছিল অন্যতম। আমার এএফপি-এর প্রাক্তন বস, ক্যাট বার্টন, ভবনটি ধসে পড়ার কয়েক বছর আগে সেখানকার একটি স্প্যানিশ কারখানার মালিকের সাক্ষাৎকার নিতে রানা প্লাজা পরিদর্শনও করেছিলেন। ​১৯৯০ এবং ২০০০-এর দশকেও আমি মালিবাগে ছোট ছোট কারখানা দেখেছি, যেখানে একশ'র কাছাকাছি লোক কাজ করত। কিন্তু ২০১০-এর দশকের মধ্যে সেগুলোর বেশিরভাগ হয় বন্ধ হয়ে গেছে বা ঢাকার উপকণ্ঠে স্থানান্তরিত হয়েছে।





‘গাজীপুরের কিছু অন্ধকার কোণে একসময় গোপনে শত শত স্যান্ডব্লাস্টিং ইউনিট কাজ করত—যা বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলোর জন্য জিন্সের স্যান্ডব্লাস্টিংয়ের মতো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করত। সাধারণত কয়েক ডজন শ্রমিক নিয়োগ করা এই কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে যায় ২০১০-এর দশকের শেষের দিকে।’কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে রপ্তানির বিপরীতমুখী চিত্রও তুলে ধরেন তিনি। তিনি লেখেন,  ‘আজ, বাংলাদেশে সক্রিয় গার্মেন্টস কারখানার সংখ্যা দুই হাজারের সামান্য বেশি, যা ১৯৯০ এবং ২০০০-এর দশকের প্রথম দিকে প্রায় পাঁচ হাজার ছিল। তবুও, আমাদের গার্মেন্টস রপ্তানি এখন ১৯৯০-এর দশকের শেষ বা ২০০০-এর দশকের প্রথম দিকের তুলনায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। ১৯৯১ সালে, আমাদের বার্ষিক গার্মেন্টস রপ্তানি প্রথমবারের মতো এক বিলিয়ন ডলারের সীমা অতিক্রম করেছিল। অথচ এই বছর শুধু ইয়াংওয়ান (Youngone) বা হা-মীম গ্রুপের মতো জায়ান্টদের প্রত্যেকেই এক বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পোশাক রপ্তানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র হা-মীম গ্রুপেই প্রায় ৫০,০০০ শ্রমিক কাজ করে।




এরপরই উঠে আসে কারখানা বন্ধের বিষয়টি। তিনি তার কিছু কারণও বের করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘​গত ২৫ বছরে নানান কারণে সারা দেশে প্রায় ৩,০০০ গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়েছে। কমপ্লায়েন্স ইস্যু এর মধ্যে একটি। দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং অদক্ষতাও অন্য কারণ। কিছু কারখানা পরিশোধ করতে না পারা ঋণের ভারে ভেঙে পড়েছে। আবার শান্তার (Shanta) মতো কেউ কেউ গার্মেন্টস উৎপাদন পুরোপুরি ছেড়ে অন্য খাতে মনোনিবেশ করেছে। কেউ কেউ শ্রমিক ব্যবস্থাপনা খুব বিশৃঙ্খল মনে করেছে। আর কেউ কেউ টাকা কামিয়ে কানাডার মতো জায়গায় পাড়ি দিয়েছে।তবে এই কারখানা কমে যাওয়ার বিষয়টিকে খুব বেশি দুশ্চিন্তার বলে মনে করেন না তিনি। তার কথা, ‘​কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত রপ্তানির পরিসংখ্যান বাড়ছে, ততক্ষণ নন-কমপ্লায়েন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের জন্য খারাপ কিছু নয়। আমাদের অনিরাপদ বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কারখানার দরকার নেই। বড় কারখানা মানেই সাধারণত উন্নত কমপ্লায়েন্স।’এরপরই তিনি একহাত নিয়েছেন বিজিএমইএসহ আরও কিছু পক্ষকে। তার কথা, ‘অথচ, আপনি যদি আজকাল বিজিএমইএ-এর প্রেস রিলিজগুলো পড়েন, তবে মনে হবে যেন প্রতিটি কারখানা বন্ধ হওয়া সরকারের ব্যর্থতা—যেন কর্তৃপক্ষ তাদের "বাঁচাতে" না পারার জন্য দোষী। এর ঠিক পরেই দেখতে পান, বিজিএমইএ-এর চির-অনুগত পদলেহী সাংবাদিকরা একই সুর তুলে বিলাপ করেন, যেন বাংলাদেশে কারখানা বন্ধ হওয়া এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এমনকি আমাদের তথাকথিত "বাম-অন" কমিউনিস্টদের কেউ কেউও ঝাঁপিয়ে পড়েন, এই বন্ধ হওয়াকে দেশের শিল্প পতনের অগ্রদূত হিসেবে ধরে নিয়ে। তাদের কেউই কখনো কষ্ট করে দেখেন না এই বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর শ্রমিকরা আরও বড়, আরও ভালোভাবে পরিচালিত প্ল্যান্টগুলোতে কাজ খুঁজে পেয়েছে কিনা।’

​’তারা ভুলে যায় যে ২০০০-এর দশকের শুরুতে বাংলাদেশে প্রায় তিন মিলিয়ন গার্মেন্টস শ্রমিক ছিল—আর এখন সেই সংখ্যাটি প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন। সমস্যা হলো, এই লোকগুলোর কেউ কেউ মনে করে তারাই শহরের একমাত্র বুদ্ধিমান। আর বাদবাকি সব আবুল।


অফিস :

MyTv Bhaban, 155, 150/3, Hatirjheel, Dhaka-1219

Phone. ☎ +880255128896 ; Fax. +880255128899

Email. admin@mytvbd.tv