বিবাহ মানব জীবনের এক শাশ্বত প্রতিষ্ঠান। ইসলাম এই সম্পর্ককে শুধু দেহ-মন বা ভালোবাসার বন্ধনে সীমাবদ্ধ রাখেনি, এটিকে দিয়েছে দায়িত্ব, ন্যায্যতা ও মর্যাদার এক পূর্ণাঙ্গ রূপ। কিন্তু একাধিক বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলেই বিতর্ক, বিভ্রান্তি ও ভুল ব্যাখ্যার ঘূর্ণিপাকে বিষয়টি প্রায়ই হারিয়ে যায় তার আসল সৌন্দর্য ও প্রজ্ঞা। ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু এটি কোনো অবাধ স্বাধীনতা নয় বরং কঠোর শর্ত, ন্যায়বিচার এবং সামাজিক দায়িত্বের ভিত্তিতে সীমিত অনুমোদন। কুরআনের নির্দেশনা স্পষ্ট, একাধিক বিয়ে করা যাবে, তবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার শর্তে। আর যদি আশঙ্কা থাকে যে ন্যায় রক্ষা করা সম্ভব হবে না, তবে একটিই যথেষ্ট।
একাধিক বিয়ের মূল উদ্দেশ্য কখনোই প্রবৃত্তি নয়, বরং এটি একটি সামাজিক সমাধান। যুদ্ধোত্তর সমাজে যখন নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেড়ে যায়, বা অসংখ্য বিধবা ও অভাবগ্রস্ত নারী আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে তখন ইসলামী সমাজে পুরুষদের প্রতি আহ্বান আসে দায়িত্বশীলতার।
এই অনুমতির মাধ্যমে ইসলাম নারীকে অবহেলার নয়, বরং সম্মানের ছায়ায় আনতে চেয়েছে। ইসলামী ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই প্রথম যুগের আলেমরা একাধিক বিয়েকে দায়িত্বের দৃষ্টিতে দেখেছেন। ইমাম শাফি রহ. বলেছেন, একজন পুরুষ তখনই একাধিক বিয়ে করতে পারে, যখন সে ন্যায়বিচার, মানসিক স্থিতি ও আর্থিক সামর্থ্যে সম্পূর্ণ যোগ্য। ইমাম মালিক রহ. মত দিয়েছেন, একাধিক বিয়ে তখনই যুক্তিসঙ্গত, যখন পারিবারিক বা মানবিক প্রয়োজন তা দাবি করে যেমন স্ত্রী দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভুগছেন, সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম, অথবা তার প্রতি স্বামী পূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. ও একইভাবে বলেছেন, একাধিক বিবাহ বৈধ, তবে শর্ত হলো, প্রত্যেক স্ত্রীর অধিকার সমানভাবে আদায় করতে হবে। সামান্যতম অন্যায়ও এ অনুমতিকে পাপের ঘরে ঠেলে দেয়। আজকের সমাজে যখন একাধিক বিয়ে নিয়ে বিতর্ক ওঠে, তখন অনেকে এটি কেবল ব্যক্তিগত ভোগের অনুমতি ভেবে ভুল করেন। অথচ ইসলাম এই ব্যবস্থাকে সমাজের ভারসাম্য রক্ষার একটি মানবিক উপায় হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। অন্যদিকে, অন্যায়, গোপন বিয়ে, বা প্রথম স্ত্রীর প্রতি অবিচার এসব ইসলাম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। সুতরাং, একাধিক বিয়ের অনুমতি ইসলামে যেমন রয়েছে, তেমনি এর প্রয়োগ সীমিত ও শর্তসাপেক্ষ। যে সমাজে ন্যায়বিচার অনুপস্থিত, সেখানে একাধিক বিয়ে বরং অন্যায়ের দরজা খুলে দিতে পারে। ইসলাম এই দরজাটি কেবল তাদের জন্য খুলেছে, যারা দায়িত্ববান, ন্যায়ের প্রতি দৃঢ় এবং সমাজের কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
একাধিক বিয়ে কোনো আনন্দের ঘোষণা নয়, বরং এটি এক গম্ভীর অঙ্গীকার ন্যায়ের ভারে বাঁধা এক প্রতিশ্রুতি। যে এই ভার বহন করতে সক্ষম নয়, তার জন্য একটিই যথেষ্ট।
লেখক: কলামিস্ট ও শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো, মিশর
একাধিক বিয়ের মূল উদ্দেশ্য কখনোই প্রবৃত্তি নয়, বরং এটি একটি সামাজিক সমাধান। যুদ্ধোত্তর সমাজে যখন নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেড়ে যায়, বা অসংখ্য বিধবা ও অভাবগ্রস্ত নারী আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে তখন ইসলামী সমাজে পুরুষদের প্রতি আহ্বান আসে দায়িত্বশীলতার।
এই অনুমতির মাধ্যমে ইসলাম নারীকে অবহেলার নয়, বরং সম্মানের ছায়ায় আনতে চেয়েছে। ইসলামী ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই প্রথম যুগের আলেমরা একাধিক বিয়েকে দায়িত্বের দৃষ্টিতে দেখেছেন। ইমাম শাফি রহ. বলেছেন, একজন পুরুষ তখনই একাধিক বিয়ে করতে পারে, যখন সে ন্যায়বিচার, মানসিক স্থিতি ও আর্থিক সামর্থ্যে সম্পূর্ণ যোগ্য। ইমাম মালিক রহ. মত দিয়েছেন, একাধিক বিয়ে তখনই যুক্তিসঙ্গত, যখন পারিবারিক বা মানবিক প্রয়োজন তা দাবি করে যেমন স্ত্রী দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভুগছেন, সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম, অথবা তার প্রতি স্বামী পূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. ও একইভাবে বলেছেন, একাধিক বিবাহ বৈধ, তবে শর্ত হলো, প্রত্যেক স্ত্রীর অধিকার সমানভাবে আদায় করতে হবে। সামান্যতম অন্যায়ও এ অনুমতিকে পাপের ঘরে ঠেলে দেয়। আজকের সমাজে যখন একাধিক বিয়ে নিয়ে বিতর্ক ওঠে, তখন অনেকে এটি কেবল ব্যক্তিগত ভোগের অনুমতি ভেবে ভুল করেন। অথচ ইসলাম এই ব্যবস্থাকে সমাজের ভারসাম্য রক্ষার একটি মানবিক উপায় হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। অন্যদিকে, অন্যায়, গোপন বিয়ে, বা প্রথম স্ত্রীর প্রতি অবিচার এসব ইসলাম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। সুতরাং, একাধিক বিয়ের অনুমতি ইসলামে যেমন রয়েছে, তেমনি এর প্রয়োগ সীমিত ও শর্তসাপেক্ষ। যে সমাজে ন্যায়বিচার অনুপস্থিত, সেখানে একাধিক বিয়ে বরং অন্যায়ের দরজা খুলে দিতে পারে। ইসলাম এই দরজাটি কেবল তাদের জন্য খুলেছে, যারা দায়িত্ববান, ন্যায়ের প্রতি দৃঢ় এবং সমাজের কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
একাধিক বিয়ে কোনো আনন্দের ঘোষণা নয়, বরং এটি এক গম্ভীর অঙ্গীকার ন্যায়ের ভারে বাঁধা এক প্রতিশ্রুতি। যে এই ভার বহন করতে সক্ষম নয়, তার জন্য একটিই যথেষ্ট।
লেখক: কলামিস্ট ও শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো, মিশর