মানুষের জীবনে বিয়ে কেন প্রয়োজন

আপলোড সময় : ০৮-১২-২০২৫ ০৪:১৮:৫০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৮-১২-২০২৫ ০৪:১৮:৫০ অপরাহ্ন
মানবসভ্যতার ইতিহাসে বিবাহ এমন এক প্রতিষ্ঠান, যা যুগে যুগে মানুষের নৈতিকতা, সমাজব্যবস্থা ও আধ্যাত্মিক ভারসাম্যের কেন্দ্রে অবস্থান করেছে। ইসলাম এই সম্পর্ককে কেবল সামাজিক চুক্তি হিসেবে বিবেচনা করেনি, বরং এটিকে মানুষের অস্তিত্ব, দায়িত্ববোধ ও শান্তিময় জীবনব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে। কুরআন একে বর্ণনা করে “সাকিনাহ”, অর্থাৎ অন্তরের প্রশান্তি ও নিরাপত্তার আধার হিসেবে। পরম করুণাময় আল্লাহ বলেন, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদেরই জন্য সৃষ্টি করেছেন সহধর্মিণী, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও; এবং তিনি তোমাদের মধ্যে স্থাপন করেছেন মমতা ও দয়া। (সূরা রূম ২১) এই আয়াত শুধু একটি সম্পর্কের বর্ণনা নয়, এটি মানবজীবনের গভীর মনস্তত্ত্ব ও সৃষ্টির দর্শনকে ব্যাখ্যা করে। বিবাহ মানুষের বাস্তব জীবনকে যেমন স্থিতি দেয়, তেমনি আধ্যাত্মিক জীবনে প্রস্ফুটন আনে দয়া, মহব্বত ও নৈতিক সংযম। 



রাসুলুল্লাহ সা. বিবাহকে তার সুন্নত হিসেবে ঘোষণা করে বলেন, বিবাহ আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হলো, সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়। (বুখারি, মুসলিম) এই বাণীতে নবীজির দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্পষ্ট বিবাহ শুধু আকাঙ্ক্ষার বৈধতা নয়, এটি মানুষের ব্যক্তিত্ব গঠন, নৈতিক শুদ্ধতা ও সমাজিক ভারসাম্যের অপরিহার্য উপাদান। তার আরেকটি সুপরিচিত বাণী— হে যুবসমাজ, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিবাহ করে, কারণ বিবাহ চোখকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে পবিত্র রাখে।(বুখারি) এখানে নবীজির নির্দেশনা মূলত মানুষের স্বভাব, সমাজ এবং নৈতিক নিরাপত্তার প্রতি গভীর উপলব্ধি থেকে উৎসারিত। 




ইসলামের চার ইমাম ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী এবং ইমাম আহমদ রহ. সবাই একমত যে বিবাহ মানবসমাজের নৈতিক কাঠামোকে সুদৃঢ় করতে অপরিহার্য। ইমাম গাজ্জালি “ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন”-এ বিবাহকে আধ্যাত্মিক শুদ্ধির অনুশীলন হিসেবে উল্লেখ করেন, যেখানে মানুষ দায়িত্ব, ধৈর্য, বিশ্বস্ততা ও আত্মসংযমের উৎকৃষ্ট শিক্ষা লাভ করে। কুরআন পরিবারকে “মিসাকান গালীয” অত্যন্ত দৃঢ় চুক্তি বলে অভিহিত করেছে। (সূরা নিসা ২১) এই শব্দবন্ধে পরিবারকে একটি পবিত্র আমানত, আর দাম্পত্যকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বন্ধনের দৃঢ়তম বিন্যাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইসলাম স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, পরিবারের ভিত্তি ভেঙে গেলে সমাজের ভিত্তিও নড়বড়ে হয়ে যায়। পরিবার কেবল দুই ব্যক্তির মিলন নয়, এটি আগামী প্রজন্মের চরিত্র ও মানবিকতার কারখানা। নবী করীম (সা.) বলেন, “তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার অধীনস্তদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।”(বুখারি) 





এই বাণী পরিবারকে নৈতিক নেতৃত্বের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ইসলাম বিবাহকে ব্যাখ্যা করে পরস্পরকে “আবরণ” “তোমরা একে অপরের জন্য আচ্ছাদন।”(সূরা বাকারা ১৮৭) এটি কেবল কাব্যিক উপমা নয়, বরং দাম্পত্য সম্পর্কের গভীরতম অর্থ একজন আরেকজনের দুর্বলতা ঢেকে রাখা, প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা এবং পরস্পরের মর্যাদাকে সম্মানে আবৃত করা। আজকের দ্রুতগতির পৃথিবীতে, যখন পরিবার ব্যবস্থার ওপর নানা চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, তখন ইসলামের বিবাহ–দর্শন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—নৈতিক সমাজ, জবাবদিহিমূলক নাগরিকতা, শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন এবং মানসিক প্রশান্তি—সবকিছুর কেন্দ্রেই রয়েছে পরিবার। আর সেই পরিবারের প্রথম ইট হচ্ছে বিবাহ, যা ইসলাম শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানবতার জন্য আশীর্বাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। 




বিবাহ তাই ইসলামি দৃষ্টিতে কেবল দাম্পত্য–অনুমতি নয়, এটি মানুষের স্বভাব, রুচি, নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ, ঈমান ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি পূর্ণাঙ্গ, পরিপূর্ণ ও করুণাময় প্রতিষ্ঠান। সমাজ যদি টিকে থাকতে চায়, পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে চাইলে—এই সুন্নত, এই পবিত্র বন্ধনকে সঠিক মর্যাদা দিতেই হবে। 





লেখক: শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর


Chairman & Managing Director : Nasir Uddin

Director News & Broadcast : Zeker Uddin Samrat

 __________________________________________________________

MyTv Bhaban, 155, 150/3, Hatirjheel, Dhaka-1219

Phone. ☎ +880255128896 ; Fax. +880255128899

Email. news@mytvbd.tv