ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান

আপলোড সময় : ২২-১২-২০২৫ ০৫:৩০:৪৬ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২২-১২-২০২৫ ০৫:৩০:৪৬ অপরাহ্ন
ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার থাকা শহীদ ওসমান হাদির পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ নিরাপত্তা। হাদির এক বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান। অন্য সদস্যদের নিরাপত্তায়ও সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

জুলাই যোদ্ধা, সমন্বয়ক ও সংসদ-সদস্য প্রার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসাবে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সম্মুখসারির কয়েকজনকে গানম্যান দেওয়া হয়েছে। তাদের ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এই তালিকায় রয়েছেন-অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা ও মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। এছাড়া বেশ কয়েকজন রাজনীতিক ও সংসদ-সদস্য প্রার্থী গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রধান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য গানম্যান চেয়েছেন।

আবেদনের ভিত্তিতে কয়েকজন রাজনীতিককে গানম্যানসহ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে শিগগিরই। এদের মধ্যে রয়েছেন-গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে বিএনপি মনোনীত সংসদ-সদস্য প্রার্থী তানভির আহমেদ রবিন, পাবনা-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাফির তুহিন, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদসহ আরও বেশ কয়েকজন।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সূত্র থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। ফ্যাসিস্টরা নির্বাচন বানচালে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনে তথ্য তুলে ধরে সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। জুলাই যোদ্ধারা শেখ হাসিনার পতনের দিন গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকেই নানা ধরনের হুমকির মুখে আছেন।

দেশে আত্মগোপনে থাকা বা বিদেশে পলাতক নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ তাদের দোসররা জুলাই যোদ্ধাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের লোকজনকে উসকে দিচ্ছেন। জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে হত্যা করা হবে বলে গত কয়েক মাস ধরে বিদেশি নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাকে ১২ ডিসেম্বর হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়। দেশে-বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দিয়েও হাদিকে বাঁচানো যায়নি। হাদির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সরকারের এই উপলব্ধি এসেছে যে, জুলাই যোদ্ধাদের যতটুকু সম্ভব নিরাপত্তা দিতে হবে। হাদির মতোই জীবন ঝুঁকির তালিকায় আছেন এবি পার্টির ব্যারিস্টার ফুয়াদ, জুলাই যোদ্ধা ও সমন্বয়ক এনসিপির হাসনাত আবদুল্লাহসহ সম্মুখসারির অনেক যোদ্ধা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাজনীতিকরা। তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি সরকারের গোয়েন্দা তথ্যেও রয়েছে।


জানা গেছে, জুলাই গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী সারা দেশের অসংখ্য যোদ্ধা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স দাবি করেছেন। তবে গুরুত্ব বুঝে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হলেও তাদের সবাইকে গানম্যান দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো ফোর্স পুলিশ বাহিনীতে নেই। আবার যারা গানম্যান দাবি করছেন, তাদের অনেকেই শিক্ষার্থী। ব্যক্তিগত যানবাহন নেই তাদের। বেশির ভাগই রিকশা বা পাবলিক বাসে যাতায়াত করেন। এ কারণে তাদের গানম্যান দেওয়া যাচ্ছে না। তবে সরকার তাদের বিষয়টি সহনশীলভাবে বিবেচনায় নিয়েছে। জুলাই যোদ্ধাদের পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি ও সমমনা দলগুলোর সম্ভাব্য এমন প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়েও ভাবছে সরকার।

এরই মধ্যে কয়েকজনের আবেদন গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুলিশের আইজি বাহারুল আলম যুগান্তরকে বলেন, যারা বেশি (ভারনারেবল) নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের একজন অস্ত্রধারী রক্ষী দিয়েছি। যারা কম ঝুঁকিতে আছেন তাদের কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, কিভাবে চলাফেরা করবেন। কোন সময় কখন কাকে কি জানাতে হবে। তিনি আরও জানান, সব বিষয় আমি বলতে পারব না। এসবির অতিরিক্ত আইজিপি তা দেখছেন।

পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। গোয়েন্দারা যাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং যাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন, তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকা বিশ্লেষণ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছি। যারা নিরাপত্তা চাচ্ছেন তাদের সবাই গানম্যান দাবি করেন। গানম্যানের পাশাপাশি অস্ত্রও চেয়েছেন কেউ কেউ। অস্ত্রের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসকের ওপর নির্ভর করছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকেও গানম্যান দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে সবাইকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, গানম্যান চাওয়া হয়েছে অনেকের জন্য। এত গানম্যান সরবরাহ পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে ‘পটেনশিয়াল থ্রেট’ আছে তাদের দেওয়া হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, গানম্যান দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই সমস্যা হচ্ছে। কারণ, তাদের অনেকেই ছাত্র। অনেকে রিকশায় চড়েন। কেউ পাবলিক যানবাহনে চলাচল করেন। এসব ব্যক্তিদের গানম্যান দেওয়া কঠিন। কীভাবে এর সমাধান করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনেক জুলাই যোদ্ধা এবং সংসদ-সদস্য প্রার্থীরা মৌখিকভাবে নিরাপত্তা চাচ্ছেন। কিন্তু এভাবে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। লিখিতভাবে যারা আবেদন করছেন তাদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। রোববার পর্যন্ত লিখিতভাবে ১২ জনের আবেদন জমা পড়েছে। এ বিষয়ে দু-এক দিনের মধ্যেই সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জুলাই যোদ্ধারা নিজেদের নিরাপত্তা চাইলেও এখনো কেউ আগ্নেয়াস্ত্র চাননি। তবে বেশ কয়েকজন সংসদ-সদস্য প্রার্থী অস্ত্রের পাশাপাশি গানম্যান চেয়েছেন।

সূত্র নিশ্চিত করেছে, অফিশিয়ালি এখনো কাউকে গানম্যান দেওয়া হয়নি। তবে ডিএমপি এবং এসবির পক্ষ থেকে যাদের গানম্যান দেওয়া হয়েছে সেগুলো আনঅফিশিয়ালি এবং অস্থায়ীভাবে। তাদের আবেদন মন্ত্রণালয় পেলে তাদের স্থায়ী নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, জুলাই যোদ্ধা এবং সংসদ-সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে যারা আমাদের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন তাদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সবাই পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে নিরাপত্তা চাচ্ছেন না। কেউ এসবির মাধ্যমে চাচ্ছেন, আবার কেউ অন্যান্য ইউনিটের মাধ্যমে চাচ্ছেন। তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধা যেমন অনেক, তেমনি নির্বাচনের প্রার্থীও অনেক। কিন্তু সবাই ঝুঁকিতে নেই। যারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন বলে মনে করছেন, তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি, রেঞ্জ ডিআইজি এবং মেট্রোপলিটন কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছি। জুলাই যোদ্ধা এবং প্রার্থীদের কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। যারা ঝুঁকিতে আছেন তাদের গতিবিধির ওপর লক্ষ্য রাখছে পুলিশ। মিটিং-মিছিলসহ যে কোনো কর্মসূচিতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে। যারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন তাদের গানম্যান দেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র চেয়েছেন তাদের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়গুলো দেখছে।


Chairman & Managing Director : Nasir Uddin

Director News & Broadcast : Zeker Uddin Samrat

 __________________________________________________________

MyTv Bhaban, 155, 150/3, Hatirjheel, Dhaka-1219

Phone. ☎ +880255128896 ; Fax. +880255128899

Email. news@mytvbd.tv